স্টাফ রিপোর্টার॥
বরিশাল বিভাগে শিক্ষক সংকটের কারণে চরম ভাবে ব্যহত হচ্ছে প্র্রাথমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা। এ অঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য রয়ে গেছে। কোন কোন স্কুলে মাত্র ২ জন শিক্ষক দিয়ে চালানো হচ্ছে পাঠদান। তার মধ্যে আবার মামলা জটিলতায় প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় ১ হাজার ৭১০টি স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই। ফলে বিপাকে পড়েছে কোমলমতী শিশু শিার্থীরা। প্রাথমিক শিা অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় উপ পরিচালক এসএম ফারুক জানান, সংকট নিরসনে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে।
বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় সাড়ে চার শ’ শিার্থীর জন্য আটজন শিকের পদ থাকলেও রয়েছেন মাত্র তিনজন। উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের বদিউল্লাহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রায় শত বছরের পুরানো। এ বিদ্যালয়েও চার শতাধিক শিার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়টির চারশতাধিক শিার্থীর জন্য মাত্র ছয়জন শিকের পদ থাকলেও কমর্রত রয়েছে তিনজন। তাও আবার প্রধানশিক ছাড়াই। বরিশালের গৌরনদী পৌর এলাকার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী গেরাকুল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিন থেকে প্রধানশিক নেই। সহকারী শিকের পদও রয়েছে শুন্য। ফলে ওই স্কুলে নামে মাত্র পড়াশুনা চলছে। বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার ৬নং কাজিরাবাদ ইউনিয়নের মধ্য কাজিরাবাদ বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২ জন শিক দ্বারা পাঠদান চলছে। এভাবেই বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলায় শত শত স্কুলে শিক্ষক সংকটের কারণে স্থাবিরতা দেখা দিয়েছে।
প্রাথমিক শিা অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়(সাবেক) ও নতুন জাতীয়করণকৃত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬ হাজার ৬৬টি। যার মধ্যে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে(সাবেক) অনুমোদিত প্রধান শিকের পদের সংখ্যা ৩ হাজার ৩০৪ জন। যার মধ্যে কমর্রত রয়েছে ২ হাজার ৫৭৪ জন এবং শূন্য রয়েছে ৭৩০টি পদ। একই ভাবে নতুন জাতীয়করণকৃত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুমোদিত প্রধান শিকের পদের সংখ্যা ২ হাজার ৬৫২ জন। যার মধ্যে কমর্রত রয়েছে ১ হাজার ৬৭২ জন এবং শূন্য রয়েছে ৯৮০টি পদ। এর মধ্যে মোট ১ হাজার ৭১০ টি প্রধান শিকের পদ শূন্য। ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলার কারণে ভেঙ্গে পড়েছে এসব স্কুলের শিা কার্যাক্রম। এদিকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে(সাবেক) অনুমোদিত সহকারী শিক পদ রয়েছে ১৫ হাজার ৯৫টি। যার মধ্যে কমর্রত রয়েছে ১৪ হাজার ১৩৪ জন। ফলে শূন্য পদ রয়েছে ৯৬১ টি। একই ভাবে নতুন জাতীয়করণকৃত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুমোদিত সহকারী শিক পদ রয়েছে ১০ হাজার ৭১০টি। যার মধ্যে কমর্রত রয়েছে ৮ হাজার ৫৮৫ জন। শূন্য পদ রয়েছে ২ হাজার ১২৫ টি। অপরদিকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে(সাবেক) অনুমোদিত শিক পদ রয়েছে ১৬ হাজার ২২০টি। যার মধ্যে কমর্রত রয়েছে ১৫ হাজার ১৪৬ জন। ফলে শূন্য পদ রয়েছে ১ হাজার ৭৩ টি। একই ভাবে নতুন জাতীয়করণকৃত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুমোদিত শিক পদ রয়েছে ১৩ হাজার ৩৬২টি। যার মধ্যে কমর্রত রয়েছে ১০ হাজার ২৫৭ জন। শূন্য পদ রয়েছে ৩ হাজার ১০৫ টি। এতে দেখা যায় বিভাগের ৮ হাজার ৯৩৩টি বিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৯০৯ শিক পদ শূন্য রয়েছে।
প্রাথমিক শিা অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, প্রায় এক হাজার রেজিস্ট্রাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারিকরণে উন্নীত করায় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার পদ মর্যাদায় হওয়ায় এখন পিএসসি’র মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হবে। তাই নিয়োগ প্রক্রিয়া দেয়ায় বিলম্ব হচ্ছে। বরিশাল জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক সমাজের সভাপতি শিক শংকর চন্দ্র পোদ্দার জানান, তিনি ২৭ বছর ধরে সহকারী শিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের পদন্নতি দেয়া হচ্ছে না। পদন্নতি জনিত কারণে একটি মামলা রয়েছে। ফলে প্রধান শিক নিয়োগ নেয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, শিক নিয়োগ না হওয়ার কারণে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। একইভাবে মন্তব্য করেছেন ভোলা ও ঝালকাঠি জেলার শিকরা।
বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার সহকারী শিা অফিসার মো: কামরুজ্জামান রেজা জানান, তার এ উপজেলার নিয়োগ কম হয়। কারণ এ উপজেলা খুবই দুর্ঘম। মূলত শহর কেন্দ্রীক উপজেলা গুলোতে বেশী শিক নিয়োগ হয়। এ কারণে তার উপজেলার শিা কার্যাক্রমে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এব্যাপারে প্রাথমিক শিা অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় শিা অফিসার উম্মে সালমা লাইজু জানান, শিক্ষক সংকটের কারণে যে সমস্য হচ্ছে তা তারা হারে হারে টের পাচ্ছেন। সহকারী শিক নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে প্রধান শিক নিয়োগ করা যাচ্ছে না। একটি মামলা থাকায় এ অবস্থা চলছে। শিা ব্যবস্থা বজায় রাখতে তারা নানা ভাবে প্রচেস্টা চালাচ্ছেন।
(Visited ৮ times, ১ visits today)