প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি মনে করি, আজকে একটা মহল থেকে আমাদের পবিত্র ধর্মকে কলুষিত করার জন্যে একটা চক্রান্ত চলছে। আজকে যদি প্রশ্ন করি, এই যে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ তাতে লাভবান হয় কারা? যারা অস্ত্র তৈরি করে, বিক্রি করে তারা লাভবান হয়। কিন্তু এই লাভটা কার জন্যে মুসলমান-মুসলমানদের রক্ত নিচ্ছে, হত্যা করছে। মুসলমানদের রক্তের বিনিময়ে অন্যরা লাভবান হচ্ছে-এটা কি ধরনের কথা।’
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে ওলামা মাশায়েখ মহাসম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সৌদি বাদশা যে উদ্যোগ নিয়েছে সেখান থেকে যাতে পবিত্র ধর্ম ইসলামের শান্তি আসে, তাদের মধ্যে যেন ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়, তারা যেন শান্তির পথে ফিরে আসে সে জন্যে আমরা আগে বলেছি, তার পাশে আছি এবং থাকব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে যেখানেই যাই না কেন, যখন আমাদের ইসলাম ধর্মের সঙ্গে জঙ্গিবাদ শব্দ ব্যবহার করে আমি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করি। আমি তাদেরকে স্পষ্টভাবে বলে দেই কয়েকটা মানুষের জন্যে আমাদের ধর্মপ্রাণ মানুষকে এভাবে হেয় করা যাবে না। যারা জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে তাদের ধর্ম নাই, দেশ নাই, সীমানা নাই-জঙ্গিবাদটাই তাদের ধর্ম। তারা ভুল পথে যাচ্ছে এটা আমাদের পবিত্র ইসলামের কথা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের কথা, যারা ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চায় তাদেরকে সুযোগ করে দেওয়া হয়। ইসলাম ধর্মের বিপক্ষে এভাবে পথে নামা, এখানেই সবচেয়ে দূভার্গ্য। আমি আপনাদের আহ্বান জানাবো, ইসলাম ধর্ম যে প্রকৃত শান্তির ধর্ম এমন শিক্ষা দেওয়া উচিত যাতে কেউ ভুল পথে না যেতে পারে।’
তিনি বলেন, যারা নিরীহ মানুষকে হত্যা করে তারা জান্নাতে যেতে পারবে না। তাদেরকে জাহান্নামে যেতে হবে।ইসলামকে হেয় করা, কলূষিত করা কখনোই সহ্য করা হবে না।
জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনেসৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের গৃহীত পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে যারা ভূমিকা রাখবে বাংলাদেশ তার পাশেই থাকবে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আজকের এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সৌদি আরবের যে দুই জন মেহমান এসেছেন তাদের বক্তব্য জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের যে অবস্থান মেহমানদের বক্তব্যে তা আরও সুদৃঢ় করবে। আপনারা যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছেন তারাও শুনে গেলেন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তারা যে মুল্যবান বক্তব্য রেখেছেন সমাজের ওলামা-মাশায়েখ ও অভিভাবকসহ সকলেই ইসলাম যে পবিত্র ধর্ম, শান্তির ধর্ম এই বার্তা সকলের কাছে পৌঁছে দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই হয়ে বসবাস করবে, কিন্তু এটা কেমন কথা-একজন মুসলমান আরেকজন নিরীহ মুসলমানকে বোমা মেরে হত্যা করে। তারা নাকি হিসাব নেয় জান্নাতে চলে যাবে। নিরীহ মুসলমানকে হত্যা করলে জান্নাতে নয়, জাহান্নামে যেতে হবে-এটি পবিত্র কোরআনে আছে।’
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রতি আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানেই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে আপনারা ব্যবস্থা নেবেন। ইতোমধ্যে আপনারা বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। এজন্যে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
সৌদি আরবের মেহমানদের অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সৌদি মেহমানদের আগমনে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে উজ্জীবিত করবে, দুই দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত করবে। অতিথিদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে ইসলাম শান্তির ধর্ম, সৌহার্দ্যের ধর্ম। ইসলাম নিরীহ মানুষকে হত্যা সমর্থন করে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ইসলাম থাকবে না, ৭৫-এর পরে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা এ ধরনের অপপ্রচার করেছে। কিন্তু ক্ষমতায় এসে যারা মদের লাইসেন্স দিয়েছিল, জাতির পিতা সৌদি আরবের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে মুসলমানদের হজে যাওয়ার পারমিশন দিয়েছিলেন, হজে পাঠাবার জন্যে হিজবুল বাহার নামে একটি জাহাজও ক্রয় করেছিলেন। অল্প খরচে সে সময়ে হজে পাঠানো হতো। কিন্তু জাতির পিতাকে ৭৫-এ হত্যা করে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা বরং জাহাজটিকে প্রমোদ বিহার হিসাবে ব্যবহার করে। তারা মুখে ইসলামের নাম করে ইসলামবিরোধী কাজ করে। ইসলাম প্রচার–প্রসারে প্রকৃত অর্থে তারা কোন কাজই করে নাই। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের উত্থান তারাই করে।’
বিকাল ৩টার দিকে মঞ্চে আসেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মসজিদুন নববীর ইমাম ও খতিব শায়খ ড. আবদুল মুহসিন বিন মুহাম্মদ আল কাশিম ও মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীর ভাইস চেয়ারম্যান শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন নাসের আল খোবাইন এর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্যে দেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল। সারদেশে থেকে শত শত আলেম ওলামা মাশায়েখসম্মেলনে যোগ দেন।