ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ খেলে ফেললেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ক্রিকেটের এই ক্ষুদ্রতম সংস্করণ থেকে তার বিদায়টা জয় দিয়েই হলো। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৪৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে জয় দিয়েই আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ বিদায় জানালেন মাশরাফি। অন্যদিকে, তাকে বিদায়ী উপহার দেওয়ার পাশাপাশি এই জয়ে ২ ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করলো বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কলম্বোর রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছিল ম্যাচটি।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৭৬ রান সংগ্রহ করে তারা। জবাবে বাংলাদেশের বোলারদের দুরন্ত পারফরম্যান্সে সামনে পড়ে ১৮ ওভারে ১৩১ রান তুলে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের পক্ষে এদিন মুস্তাফিজুর রহমান ৪টি ও সাকিব আল হাসান ৩টি উইকেট নিয়েছেন। বিদায়ী ম্যাচে মাশরাফিও নিয়েছেন একটি উইকেট। বাকি দুটি উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তরুণ পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশের দেওয়া টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়েছে শ্রীলঙ্কা।ইনিংসের শুরুতেই লঙ্কান শিবিরে আঘাত হেনেছেন সাকিব আল হাসান। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই লঙ্কান ওপেনার ও আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান কুশাল পেরেরাকে আউট করেছেন তিনি। এরপর নিজের দ্বিতীয় ও ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আরেক লঙ্কান ওপেনার দিলশান মুনাবিরাকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্যাচ বানিয়েছেন তিনি।
এই ধাক্কা সামলানোর আগেই আরো ৩ উইকেট হারিয়েছে শ্রীল্কানরা। স্বাগতিকদের অধিনায়ক উপল থারাঙ্গাকে আউট করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরপর জোড়া আঘাত হেনেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। গুনারত্নে ও শ্রীলবর্ধনাকে।
৫.২ ওভার শেষে মাত্র ৪০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে শ্রীলঙ্কা! অবশ্য কাপুগেদারা ও থিসারা পেরেরা বিপদ সামলানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সাকিব ও মুস্তাফিজের পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্য বোলার ও ফিল্ডারদের নৈপুণ্যে সফল হতে পারেননি তারা। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে নিয়েছে ৪৫ রানে।
ইনজুরির কারণে এই ম্যাচে ছিলেন না বাংলাদেশের নিয়মিত ওপেনার তামিম ইকবাল। তার জায়গায় একাদশে সুযোগ পেয়েছেন ইমরুল কায়েস।
টস জিতে আগে ব্যাটিং বেছে নেন মাশরাফি। দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকার দলকে দুরন্ত সূচনা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছেন তারা। দলীয় ৭১ রানে (৬.৩ ওভারে) গুনারত্নের বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন সৌম্য, ব্যক্তিগত ৩৪ রানে (১৭ বলে)। সৌম্য আউট হওয়ার কিছু পরে ব্যক্তিগত ৩৬ রানে (২৫ বলে) রান আউট হয়েছেন ইমরুল। এরপর দলের হাল ধরেছেন সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমান।
এ জুটিতে ৪৬ রান পেয়েছে বাংলাদেশ। দলীয় ১২৪ রানে সাঞ্জায়ার বলে বোল্ড হন সাব্বির; ব্যক্তিগত ১৯ রানে। সাকিব বিদায় নেন দলীয় ১৩৯ রানে; ১৬ ওভারে। এরপর ১৭.১ ওভারে বিদায় নেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এরপর কিছু সময়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাটিং নড়বড়ে হয়ে যায়। এর মধ্যে ইনিংসের ১৯তম ওভারে হ্যাটট্রিক আদায় করে নেন লঙ্কান পেসার লাসিথ মালিঙ্গা। একে একে আউট করেছেন মুশফিক, মাশরাফি ও মিরাজকে। শেষ পর্যন্ত স্নেই বিপদ সামলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান করে বাংলাদেশ। দলীয় সংগ্রহের বিবেচনায় আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচে এটি বাংলাদেশের ৬ষ্ঠ সেরা সংগ্রহ (সর্বোচ্চ সংগ্রহ ১৯০ রানের, আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে)।
মাশরাফি বিন মর্তুজার দলের জন্য এটি ছিল সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচ। কারণ, প্রথম টি২০ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ৬ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। তাই এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল মাশরাফি বাহিনীর জন্য। তবে অধিনায়ককে বিদায়ী উপহার দিতেও এই ম্যাচে মরিয়া ছিলেন বাংলাদেশের বোলারার।
এই ম্যাচ দিয়েই এবারের শ্রীলঙ্কা সফর শেষ করছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। সিরিজে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করেছে টাইগাররা। এরপর দুই দলের মধ্যকার ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও ১-১ সমতায় শেষ হয়েছে; দ্বিতীয় ওয়ানডে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছিল।
একাদশে দুটি পরিবর্তন এনে বৃহস্পতিবার মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। ইনজুরির কারণে ওপেনার তামিম ইকবাল ম্যাচ খেলননি। তার পরিবর্তে নেওয়া হয় ইমরুল কায়েসকে। অন্যদিকে, পেসার তাসকিন আহমেদের পরিবর্তে একাদশে নেওয়া হয় স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজকে। এই ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচে মিরাজের অভিষেক হয়েছে।
শ্রীলঙ্কান একাদশে কোনো পরিবর্তন নেই; প্রথম টি২০ ম্যাচের একাদশ নিয়েই খেলতে নেমেছিল স্বাগতিকরা।
বাংলাদেশ টি২০ একাদশ :ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল-হাসান (সহ-অধিনায়ক), মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান।
শ্রীলঙ্কা টি২০একাদশ:কুশাল পেরেরা, উপুল থারাঙ্গা (অধিনায়ক), দিলশান মুনাবিরা, আসিলা গুনারত্নে, সিকুগে প্রসন্না, থিসারা পেরেরা, চামারা কাপুগেদারা, মিলিন্দা সিরিবর্দানা, নুয়ান কুলাসেকারা, লাথিস মালিঙ্গা, ভিকাম সঞ্জয়া।