বঙ্গোপসাগরে বায়ু চাপের পার্থক্য বেশি হওয়ায় ঝোড়ো হাওয়া বইছে। এজন্য সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। একই সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার থেকেই আবহাওয়ার এই অবস্থা ধীরে ধীরে কেটে যেতে পারে।
রবিবার (২ এপ্রিল) থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও সোমবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঢাকায় এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। এরপর থেমে থেমে কয়েক দফা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি অফিস থেকে ঘরে ফিরতে নগরবাসীকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। বৃষ্টির কারণে যানবাহন সংকট দেখা দেয় গুলিস্তান, ফার্মগেট, শাহবাগ, যাত্রাবাড়ীসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে। বাড়ি ফিরতে এ সব স্থানে মানুষের প্রচণ্ড ভীড় দেখা গেছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ঢাকায় ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার বসন্তের শেষ মাস চৈত্রের ২০ তারিখ। আগামী ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ শুরু হবে বাংলা নতুন বছর। শুরু হবে প্রথম ঋতু গ্রীষ্ম।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুস জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ু চাপ পার্থক্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এজন্য উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমূদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক
সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
অপরদিকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত ভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেও পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে, সেখানে ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এ সময়ে চট্টগ্রাম, সীতাকুন্ড, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, শ্রীমঙ্গল, ভোলা, চুয়াডাঙ্গা, নেত্রকোণা, রাঙ্গামাটিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিভাগ।
এপ্রিলে ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী ও তাপপ্রবাহ আসছে
এপ্রিল মাসে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া কালবৈশাখী ও তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস দিতে আবহাওয়া অধিদফতরের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি এ পূর্বাভাস দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরে সোমবার (৩ এপ্রিল) কমিটির নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অধিদফতরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদের এতে সভাপতিত্ব করেন।
সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, এপ্রিল মাসে দেশে স্বাভাবিক বা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
এপ্রিল মাসে দেশের উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত ২ থেকে ৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি বা তীব্র কালবৈশাখী বা বজ্র-ঝড় হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র ৪ থেকে ৫ দিন হালকা বা মাঝারি কালবৈশাখী বা বজ্রঝড় হতে পারে বলেও জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞ কমিটি পূর্বাভাসে আরও জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ (তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়ারের বেশি) এবং অন্যত্র ১ থেকে ২টি মৃদু (তাপমাত্রা ৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা মাঝারি (তাপমাত্রা ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
কমিটি আরও জানিয়েছে, সদ্য শেষ হওয়া মার্চ মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫২ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। মার্চ মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে এক দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম ছিল।