ইসলামী ব্যাংকের ঘোষিত লভ্যাংশ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের হতাশার প্রতিফলন দ্বিতীয় দিনের মতো দেখা গেছে বাজার লেনদেনে। সোমবার (৩ এপ্রিল) ব্যাংকটির শেয়ারের দর কমেছে ১.৩৯ শতাংশ। দিনের শুরুতে ব্যাংকটির শেয়ারের দর ছিল ৩৬ টাকা, যা দিনশেষে কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫.৫০ টাকায়। অবশ্য রবিবার (২ এপ্রিল) ব্যাংকটির শেয়ারের বড় ধরনের পতন ঘটেছিল। ওইদিন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের দরের পতন ঘটেছিল ১২.৪১ শতাংশ। ৪১.১০ টাকা থেকে ব্যাংকটির শেয়ারের দর নেমে যায় ৩৬ টাকায়। এরফলে দরপতনে শীর্ষ কোম্পানির তালিকায় নাম উঠে ইসলামী ব্যাংকের।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৬ সালে সমাপ্ত হিসাব বছরের লভ্যাংশ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের হতাশার প্রতিফলনই ঘটেছে বাজারে। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ)অনুষ্ঠিত ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০১৬ সালের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। আলোচ্য বছরে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২.৭৮ টাকা। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ২.১২ টাকা। আগের বছরের তুলনায় ব্যাংকটির আয় বাড়লেও লভ্যাংশের পরিমাণ কমেছে।
শুধু গত বছরের তুলনায়ই নয়, ১৯৮৫ সালে তালিকাভূক্তির পর এবারই ব্যাংকটি সবচেয়ে কম লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, এমনটিও ধারণা করছেন কেউ কেউ।
তবে ডিএসইর ওয়েবসাইটে ইসলামী ব্যাংকের যে তথ্য রয়েছে তাতে দেখা যায়, গত ১৪ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ।
কম লভ্যাংশ ঘোষণায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
অবশ্য ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান লভ্যাংশ কম দেওয়ার বিষয়ে বলেন, ব্যাংকের অবস্থান সুসংহত করতেই লভ্যাংশ কম দেওয়া হয়েছে।
তবে চেয়ারম্যানের সঙ্গে একমত পোষণ করেননি বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, ইসলামী ব্যাংক দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যাংক। মূলধন, রিজার্ভ, আয়সহ সব বিবেচনায় এটির অবস্থান সুসংহতই। বরং লভ্যাংশ কম ঘোষণার কারণে কোম্পানিটির সক্ষমতা নিয়ে সংশয় ও হতাশা তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
একটি বেসরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির সিনিয়র অ্যানালিস্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে যে প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ঘটেছে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। এরফলে ব্যাংকটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের এক ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে। আস্থার সংকটও রয়েছে কিছুটা। এখন ভালো লভ্যাংশ ঘোষণার মাধ্যমে সে আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠা যেত। কিন্তু তা হয়নি।
লভ্যাংশ কম ঘোষণা করে ব্যাংকটি ভবিষ্যতে বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করেছে কি না, এমনটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকের রিজার্ভ অত্যন্ত ভালো। যথেষ্ঠ পরিমাণে আমানতও রয়েছে। নতুন বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকটির মুনাফা রিটেইন (ধরে রাখার)করার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমার মনে হয় না।
তিনি আরও বলেন, ইসলামী ব্যাংক বিশ্বের শীর্ষ এক হাজার ব্যাংকের মধ্যে একটি। শীর্ষ হওয়ার জন্য অনেকগুলো সূচক (প্যারামিটার) কাজ করে, তারমধ্যে লভ্যাংশও একটি। কিন্তু এবার লভ্যাংশ কম ঘোষণা করায় একটি প্যারামিটারে পিছিয়ে গেছে ব্যাংকটি। লভ্যাংশ কম ঘোষণায় বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরও ব্যাংকটির প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে বাজারে গুজব রয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দরের পতন ঘটিয়ে একটি গোষ্ঠী ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে।