মোঃ শাহাজাদা হিরা ॥
সিনিয়ার স্টাফ রির্পোটার.
ঐতিহ্যবাহী বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের দিন দিন অকার্যকর সিটিতে রুপ নিচ্ছে। নগরবাসীর সেবা প্রদানকারী গুরুত্বপূর্ন এই প্রতিষ্ঠানটি এখন নগরবাসীকে সীমাহিন ভোগান্তিতে ফেলেছে। কর্মচারীদের লাগাতার কর্মবিরতীতে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নগরবাসী। অবশেষে এক সপ্তাহের লাগাতার কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থান ধর্মঘট ও লাগাতার কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বিসিসির মেয়রের আশ্বাসে কাজে যোগ দেওয়ার ঘোষণা বিসিসি কর্মকর্তাদের মেয়র, কাউন্সিলর, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠক শেষে রোববার সন্ধ্যায় ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন র্কর্মকর্তা দীপক লাল মৃধা বলেন, মেয়র, সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিকেল সাড়ে ৪টায় করপোরেশনের এনএক্স ভবনের তৃতীয় তলায় বৈঠক হয়।
বৈঠকে আন্দোলনরত নিয়মিত ও দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিনিধিরা তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বৈষম্য দূর, মৃত্যুর পর অনুদানসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে কথা বলেন।
কান্তিপূর্ণভাবে এ বৈঠকে মেয়র সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২ মাসের বকেয়া বেতন ও নিয়মিতদের ২ মাসের বকেয়া বেতন প্রদান করে ৫টি প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দেওয়ার কথা বলেন। পাশাপাশি চলতি মাসের ২৫ তারিখের মধ্যে আরো একটি বকেয়া বেতন পরিশোধ করার কথা বলেন।
এছাড়া বাকি দাবিগুলো নিয়ে পর্যায়ক্রমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন মেয়র।
এক সপ্তাহ ধরে চলা এ কর্মবিরতির ফলে অচল হয়ে পরেছিলো সিটি কর্পোরেশনের সকল কর্মকান্ড। পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন ও ৩২ মাসের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ভাতা প্রদানের দাবিতে ২৭ মার্চ সোমবার সকাল থেকে অনিদিস্টকালের কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) নিয়মিত ও দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই চলমার কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘটের ফলে নগরবাসী সিটি কর্পোরেশনের কোন প্রকার সুবিধা পাচ্ছে না। এমনকি সুন্দর নগরী এখন ময়লার নগরীতে রুপ নিয়েছে। এক সপ্তাহে বরিশাল সিটিতে বসবাস রতো হাজারো পরিরারের প্রতিদিনকার ময়লা আবরর্য়না জমে এখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে পশাপাশি এই ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে নগরবাসী বিভিন্ন স্থানে ফেলছে। যার ফলে ওলিগোলিতে ময়লা পচাঁ দুর্গন্ধে টেকা যাচ্ছেনা। নগরবাসীর একজন মোঃ আসলামুল করিম (৫০) বলেন, বরিশালের ইতিহাসে নগরীর এমন দূরদশা আমরা কখনো দেখিনি। আমাদের এখন ঘর থেকে বের হরার কোন উপায়নেই সবখানেই ময়লা পঁচা দুর্গন্ধ এই অবস্থা থেকে নগরবাসী মুক্তি চায়।
এদিকে গতকাল শনিবার দুপুরে বিসিসির মেয়র বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের চলমান সংকট বিষয়ে নগরবাসীকে অবহিতকরণ বিষয়ক এক সংবাদিক সম্মেলনে তিনি অভিযোগ তুলে বলেন, আমরা বিভিন্ন ভাবে যানতে পেরেছি বেতন ভাতার কথা বলে কর্মচারীদের জিম্মি করে একটি কুচকরি মহল অনৈতিক ভাবে নিজস্ব স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা করছে, এমনকি ব্যক্তিগত অনৈতিক সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারাই বিসিসির সাধারণ কর্মচারীদের দিয়ে কর্মবিরতি এবং অবস্থান ধর্মঘট পালন করাচ্ছে। সাংবাদিক দের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বিসিসির ৩৫ জন কাউন্সিলা দের সাথে আলোচনা করে এই চলমান সমস্যা সমাধানে ইতিমধ্যে ব্যংকে র্কমর্কতা-র্কমচারীদরে একমাসের বেতন ভাতা দেওয়া হয়েছে। বাকি একমাসের বকেয়া বেতন ভাতা আগামি কাল ২ এপ্রিল সকাল ১০টায় নগর ভবনে বসে পরিশধ করা হবে। পাশাপাশি সকল র্কমর্কতা-র্কমচারীদরে কে সকালেই স্ব-স্ব কর্মস্থলে যোগ দান করার জন্য বলা হবে। যদি কোন কর্মকর্তা কর্মচারী কর্মস্থলে যোগদান না করে তবে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমনকি যদি কোন র্কমর্কতা-র্কমচারীরা স্ব-স্ব কর্মস্থলে যোগ দান না করে, তবে তাদের নিয়োগ বাতিল করে নতুন র্কমর্কতা-র্কমচারী নিয়োগ দেওয়া হবে। এদিকে নগর ভবনের মূল গেটের সামনে ময়লা ভতি ময়লার গাড়ি ও ভবনের প্রবেশদ্বার আটকে দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে আন্দোলনকারী কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন, কর নির্ধারক এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, মেয়র সংবাদ সম্মেলনে আগের মেয়রের সময়ের ৩ মাসের বকেয়া রয়েছে বলে জানিয়েছেন, তা সঠিক নয়। আবার গুটি কয়েক কর্মচারীকে ভয় দেখিয়ে আন্দোলনে বাধ্য করছে সে কথাও সঠিক নয়। মেয়র আহসান হাবিব কামাল কয়েকজন কাউন্সিলরকে সঙ্গে নিয়ে কর্পোরেশনে আসবেন এমনটি শোনা যাচ্ছে। তিনি আমাদের সঙ্গে কথা না বলে কর্পোরেশনে কোনো কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারেন না। সে জন্যই আন্দোলনকারী কর্মচারীরা মূল গেটের সামনে ময়লার গাড়ি ও ভবনের প্রবেশদ্বার আটকে দিয়েছে। পাশাপাশি তার ভবনের সামনে বসে লাগাতার কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন। দাবী পূরন না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন কর্মসূচি চলবে বলেও তিনি বলেন। এদিকে আন্দোলনের কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে মেয়র কর্পোরেশনে যেতে না পারলেও রবিবার সকাল ১০ টায় কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে নগর ভবনে আসার কথা থাকলেও নিরাপত্তার কারনে তিনি নগর ভবনে যাননি। পরে বিকেল সাড়ে ৪টায় করপোরেশনের এনএক্স ভবনের সভা শেষে সিটি করপোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামাল বলেন, আন্দোলনকারী স্টাফদের দাবি দাওয়ার মধ্যে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২ মাসের বকেয়া বেতন ও নিয়মিতদের ২ মাসের বকেয়া বেতন প্রদান করে ৫টি প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দ্রুত দেওয়া হবে। পাশাপাশি সম্ভব হলে নিয়মিতদের আরো ১টি বেতন দ্রুত দেয়া হবে।
আন্দোলনকারীরা রবিবার দিবাগত রাত থেকেই তাদের লাগাতার কর্মবিরতি থেকে সরে গিয়ে কাজে যোগদান করার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।