লালমনিরহাট প্রতিনিধি : লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় দুই হাতের আঙুল না থাকায় কব্জির সাহায্যে লিখে এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন শাহ আলম। রবিবার (২ এপ্রিল) হাতীবান্ধা মহিলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে দু’হাতের কব্জি দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে শাহ আলম।
শাহ আলম হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব বিছনদই গ্রামের একরামুল হক ও মরিয়ম বেগমের ছেলে। সে হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র।
পরীক্ষা শেষে শাহ আলম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আমার বাবা একজন বর্গা চাষি এবং মা গৃহিণী। ৫ ভাই-বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। এক বছর বয়সে আমার দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত আগুনে পুড়ে যায়। বাবার চিকিৎসার সামর্থ্য না থাকায় দুই হাতের সবগুলো আঙুলই হারাতে হয় আমাকে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার অদম্য ইচ্ছা ছিল আমার। স্থানীয় ব্রাক স্কুল থেকে লেখাপড়া শুরু করি। এরপর সমাপনী পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করায় ইচ্ছে শক্তি আরও বেড়ে যায় আমার।
পরিবারের অভাব-অনটন থাকার পরেও আমি খেয়ে না খেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে জেএসসি ও এসএসসিতে ভালো ফলাফল করে এবার এইচএসসি ভাল ফলাফলের চেষ্টা করছি। আমি পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চাই।
শাহ আলমের বাবা একরামুল জানান, আগুনে দুটো হাত হারালেও কখনও মনোবল হারায়নি শাহ আলম। আর তাই সে এখন লেখাপড়া করে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সাত সদস্যের অভাবী পরিবারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ছেলের সেই স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত পূরণ হবে কি না জানি না।
হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ সরওয়ার হায়াত খান বলেন, ‘শাহ আলমের পড়াশোনায় বেশ আগ্রহ। সে একজন মেধাবী ছাত্র। সে ভবিষ্যতে আরও ভাল করবে বলে আশা করি।’
তিনি আরও বলেন, শাহ আলম অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের চেয়ে তার আঙুলবিহীন হাতের লেখাও অনেক সুন্দর। আর তার ওই সুন্দর লেখা দেখে শুধু পরীক্ষার্থীরাই নন, শিক্ষকরাও অভিভূত।
হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান ভেলু দ্য রিপোর্টকে জানান, শাহ আলম প্রতিভাবান ছাত্র। তার দরিদ্র বাবা-মায়ের পক্ষে লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাওয়া খুবেই কষ্টকর। তাই সমাজের বিত্তবান কেউ শাহ আলমের পাশে দাঁড়ালে তার ভবিষ্যত স্বপ্ন পূরণে কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।