অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘আগামী ২ বছর পরে দেশে কোনো বিড়ির অস্তিত্ব থাকবে না। একেই সঙ্গে যেসব সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন ও টিউশন ফি ১২ থেকে ২০ টাকার মধ্যে সেগুলো বাড়িয়ে আগামী বাজেটে ৫ গুণ করা হবে।’
বেতন ও টিউশন ফিতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খরচ বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন।
অর্থমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ৪১৫ লাখ কোটি টাকা হতে পারে।’
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ২০০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) মন্ত্রী এসব কথা বলেছেন।
সভায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) কর্তাব্যক্তিরা বাজেট বিষয়ে তাদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া ও পরামর্শ অর্থমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। এনজিও প্রতিনিধিরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যকে (এসডিজি) সামনে রেখে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের আহ্বান জানান । এ জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি, স্যানিটেশন, পরিবেশ, অবহেলতি জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ইত্যাদি খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। সভায় ৩৭টি এনজিওর প্রধান কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘২০৩০ সালের আগেই বাংলাদেশ এসিডিজি অর্জনে সক্ষম হবে। তবে এ ক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে। এ জন্য জেলা পরিষদগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে।’
গভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রকল্প সমন্বয়ক ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘ সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর বেতন ও টিউশন ফি ১২ থেকে ১৬ টাকা। হোস্টেল ফিও অনেক কম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেতন ও আবাসিক হলের চার্জও দীর্ঘদিন ধরে অনেক কম। অথচ একই সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-টিউশন ফি অনেক বেশি। তাই যৌক্তিকভাবে এগুলো (সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর) বাড়ানো উচিত। স্বাস্থ্যখাতে আইসিইউর নামে যে বাণিজ্য চলছে, তা বন্ধ হওয়া উচিত। দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর আইসিইউর ভাড়া ফাইভ স্টার হোটেলের চেয়েও বেশি।’
দেশের সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন হেলথ সেন্টারে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অতিরিক্ত ১ বছর সেবাদান বাধ্যতামূলক করা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির ওপর কর কমানোর দাবি জানান ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
সভায় বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানিয়ে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, ‘দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ অথবা মোট জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা এখন সময়ের দাবি। এ জন্য সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর বাস্তবায়নের বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে হবে এবং তার ভিত্তিতে শিক্ষাখাতে ক্রমান্বয়ে মোট বাজেটের ২০ শতাংশ অর্থবরাদ্দের জন্য দিক নির্দেশনা দিতে হবে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘এ জন্য ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ১৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করছি এবং পরবর্তী জাতীয় বাজেটে পর্যায়ক্রমে ১-২ শতাংশ করে ২০ শতাংশ করতে হবে। একই সঙ্গে বরাদ্দকৃত অর্থেও যথাযথ ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে জেলা ও উপজেলাভিত্তিক শিক্ষা পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।।’
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী শাহীন আনাম বলেছেন, ‘সরকার ইতিমধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি চালু করেছে। প্রতিবন্ধী, দলিত, হিজড়া, বেদে ইত্যাদি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য আগামী বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন।’
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জন্য গতানুগতিক বাজেট বরাদ্দ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা তা বিবেচনার দাবি জানিয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক আবু নাসের খান বলেছেন, ‘অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতো পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তর প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়েই ব্যস্ত থাকে। অথচ তাদের কাজ হওয়া উচিত অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদে কী প্রভাব পড়বে তা মূল্যায়নে কাজ করা।’ এ জন্য তিনি প্রকল্পভিত্তিক বাজেট বরাদ্দের পরিবর্তে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জন্য রোডম্যাপ তৈরি করে অর্থ বরাদ্দের পরামর্শ দেন। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় বেভারেজ ও ফাস্টফুড পণ্যের ওপর অধিকহারে কর আরোপেরও দাবি জানান তিনি।