এক বছরের ব্যবধানে ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে শেষে ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ৪৬২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
এর আগে ২০২১-২০২২ অর্থবছর শেষে ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৪৭ হাজার ৫৬২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৯০০ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ’ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত জুনের শেষে ব্যাংকগুলো নিজ নিজ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের এ হিসাব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে পাঠিয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে ব্যাংকগুলোর সম্পাদিত বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ) আওতায় প্রতি ছয় মাস অন্তর রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে পাঠিয়ে থাকে। এসব ব্যাংক হচ্ছে, সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বিডিবিএল ও বেসিক ব্যাংক।
এপিএ চুক্তি অনুযায়ী, সমাপ্ত অর্থবছর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী খেলাপি ঋণের স্থিতি রাখতে সক্ষম হয়নি ব্যাংকগুলো। তাদের মোট খেলাপি ঋণ এপিএ’র লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ হাজার ৭৬২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বেশি।
সূত্র জানায়, অগ্রণী, রূপালী ও জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে। টাকার অঙ্কে খেলাপি ঋণের শীর্ষে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। এর পরই রয়েছে জনতা ও সোনালী ব্যাংক। অন্য দিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম হলেও খেলাপি ঋণের হারে শীর্ষে রয়েছে বেসিক ব্যাংক। এর পরের স্থানে রয়েছে বিডিবিএল।
ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব মতে, গত জুন শেষে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এটি ব্যাংকের বিতরণকৃত মোট ঋণের ২২ শতাংশ। গত বছর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা এবং খেলাপি ঋণের হার ছিল ১৩ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা।
গত জুন শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এটি ব্যাংকের বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৭ দশমিক শতাংশ। গত বছর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং খেলাপি ঋণের হার ছিল ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা।
গত জুন শেষে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। এটি ব্যাংকের বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০২২ সালের জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ১২২ কোটি টাকা।
গত জুন শেষে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২২৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এটি ব্যাংকের বিতরণকৃত মোট ঋণের ২১ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৪৫৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৭৬৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
গত জুন শেষে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৪৭৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এটি ব্যাংকের বিতরণকৃত মোট ঋণের ৫৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত বছর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৬৩২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং খেলাপি ঋণের হার ছিল ৫৩ দশমিক ৬২ শতাংশ।
গত জুন শেষে বিডিবিএলের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এটি ব্যাংকের বিতরণকৃত মোট ঋণের ৪১ দশমিক ৫০ শতাংশ। গত বছর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭২৯ কোটি ১২ লাখ টাকা এবং খেলাপি ঋণের হার ছিল ৩০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে বিডিবিএলের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৯৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু নানা কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা চাচ্ছি, খেলাপি ঋণ না কমানো গেলেও এটি যেন বৃদ্ধি না পায়।