ব্যাট হাতে সাকিব আল হাসান ও ইফতিখার আহমেদের দারুণ ফর্ম চলছেই। সেই সৌজন্যে চলমান আছে ফরচুন বরিশালের জয়রথ। চট্টগ্রামে নাসিরের ঢাকা ডমিনেটরসকে হারিয়ে টানা পঞ্চম জয় তুলে নিয়ে টেবিলের শীর্ষে ফরচুন বরিশাল। ব্যাট হাতে নাসির এ ম্যাচেও ছিলেন উজ্জ্বল তবে পারেননি শেষ হাসি হাসতে।
ফরচুন বরিশালকে হারাতে শেষ ৬ বলে ঢাকা ডমিনেটর্সের দরকার ছিল ২৫ রান। টি-টোয়েন্টিতে এমন রান হয়ে যায়। ভাগ্যকেও পাশে থাকতে হয়। কিন্তু নাসির হোসেন ও আরিফুল ইসলাম পারলেন না সমীকরণ মেলাতে। কামরুল ইসলাম রাব্বীর করা শেষ বলে নাসির চার হাঁকালেও ঢাকা পিছিয়ে থাকে ১৩ রানে।
চট্টগ্রামে টস জিতে বরিশালকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ঢাকা। আগের রাতেই বরিশাল ২৩৮ রান তুলে এলোমেলো করে দিয়েছিল রংপুরের বোলিং। কিন্তু আজ তাদের ১৭৩ রানের বেশি করতে দেয়নি নাসিরের দল। লক্ষ্য তাড়ায় ঢাকা ৪ উইকেট হারিয়ে ১৬০ রানের বেশি করতে পারেনি তারা।
ঢাকার টানা পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ ছিল টপ অর্ডারে রান না আসা। তবে আজ চিত্রটা ছিল ভিন্ন। উসমান ঘানি ও সৌম্য সরকার ৫.২ ওভারে তুলে নেয় ৪৬ রান। দুজনই ছিলেন আক্রমণাত্মক। আগের দুই ম্যাচে রানের খাতা খুলতে না পারা সৌম্য চার মেরে শূন্যের হ্যাটট্রিক থেকে বাঁচেন। তৃতীয় ওভারে সাকিবকে ছক্কা উড়ান ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে।
ওই ওভারে ডানহাতি ব্যাটসম্যান উসমান স্লগ সুইপে দুটি ছক্কা হাঁকান। ১৯ রানের ওই ওভার দেখে মনে হচ্ছিল ঢাকা চমকে দেবে। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন। ১৯ বলে ৩০ রানে উসমান আউট হন। সৌম্য ১৫ বলে ১৬ রানের বেশি করতে পারেননি। মিথুনের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যান মোহাম্মদ ইমরান। ৫৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ঢাকার জয় তখন অনেক দূরে।
কিন্তু নাসির ও মিথুন চেষ্টা চালালেন। দুজনের ৬০ বলে ৮৯ রানের জুটিতে ম্যাচে ছিল ঢাকা। দুজন আরেকটু আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করলেই শেষ দিকে কাজটা সহজ হয়ে যেত। মোহাম্মদ ওয়াসিমের বলে মিথুন ১৯তম ওভারে বোল্ড হলে ভাঙে জুটি। ড্রেসিংরুমে ফেরার আগে ৩৮ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৭ রান করেন।
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নাসির ৩৬ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৫৪ রান করেন। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ২৬৯ রান নিয়ে সাকিবের পরই তার অবস্থান। সাকিব ২৭৫ রান নিয়ে রয়েছেন শীর্ষে।
এর আগে বরিশালের ইনিংসটি ছিল ছক কাটা পরিকল্পনায়। শুরু থেকে তারা আক্রমণে যাবেন তা বোঝা যাচ্ছিল। প্রথমবার সুযোগ পাওয়া সাইফ হাসান বড় কিছু করতে পারেনি। ৬ বলে ২ বাউন্ডারিতে সীমানায় তাসকিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ড্রেসিংরুমে। নিজের বোলিংয়ের পর সীমানায় গিয়ে দৌড়ে ড্রাইভ দিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন তাসকিন।
পরের উইকেটেও তার অবদান। এনামুল হক বিজয় স্পিনার আরাফাত সানীকে উড়াতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন। এবার উড়ন্ত তাসকিন বল জমিয়ে নেন হাতের মুঠোয়। তিনে-চারে নামা মিরাজ ও চতুরঙ্গ ভালো করতে পারেননি। নাসিরের স্পিনে হতবাক হয়ে মিরাজ ফেরেন ১৭ রানে। চতুরঙ্গকে ১০ রানে এলবিডব্লিউ করেন এই স্পিনার।
আরেকপ্রান্তে নেমে সাকিব আগের রাতে যেভাবে পারফর্ম করেছিলেন সেভাবেই এগিয়ে যান। চার-ছক্কায় মাঠ মাতিয়ে রাখেন। মনে হচ্ছিল আজও পেয়ে যাবেন আরেকটি ফিফটি। কিন্তু ৩০ রানে তাকে দারুণ এক স্লোয়ারে আটকে দেন মুক্তার আলী। ১৭ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় সাজান ইনিংসটি।
এরপর ঢাকার বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালান আগের রাতে সেঞ্চুরি পাওয়া ইফতেখার আহমেদ। ৩৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৫৬ রান করেন ইফতেখার। তার সঙ্গে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৩১ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৩৫ রান করেন। দুজনের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে আসে ৫৭ বলে ৮৪ রান।
বল হাতে নাসির ১৬ রানে নেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন সালমান, আরাফাত সানী ও মুক্তার। ছয় ম্যাচে ঢাকার এটি পঞ্চম হার। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে তাদের অবস্থান। সিলেট সমান ম্যাচে পাঁচ জয়ে রয়েছে শীর্ষে। বরিশালও ছয় ম্যাচে জিতেছে পাঁচটিতে। রান রেটে পিছিয়ে থাকায় সাকিবের দল শীর্ষ দুইয়ে থেকে শেষ করল চট্টগ্রাম পর্ব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফরচুন বরিশাল ১৭৩/৫, ২০ ওভার
ইফতিখার ৫৬*, রিয়াদ ৩৫*, সাকিব ৩০
নাসির ২/১৬, আরাফাত ১/১৭
ঢাকা ডমিনেটরস ১৬০/৪
নাসির ৫৪*, মিঠুন ৪৭, উসমান ৩০
চতুরাঙ্গা ১/২২, করিম ১/২৬