দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও দলটির অনেক নেতা অংশ নেবেন এবং তাদের ঠেকানো যাবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজের সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন উকিল আবদুস সাত্তার। দলীয় সিদ্ধান্তে গত ১১ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ওই আসনের উপনির্বাচন আবারো প্রার্থী হয়েছেন তিনি। তিনি দলের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগও করেছেন। পরে দল থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়।
বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আসলে বিএনপির সিদ্ধান্তগুলো তো সমুদ্রের ওপার থেকে আসে। যিনি বা যাদের বাংলাদেশের বাস্তবতা সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই, তারা ১৫-১৬ বছর ধরে দেশের বাইরে। দেশের পরিস্থিতি কি সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই।’
‘ব্যক্তিগতভাবে আমিও মনে করি বিএনপির এমপিদের পদত্যাগ করা অদূরদর্শী একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। আব্দুস সাত্তার সাহেবের নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে আসলে বিএনপির সম্মুখসারির অনেক নেতাই নির্বাচনমুখী। তারা নির্বাচন করতে চায়। এবং তাদের অনেকেই মনে করেন ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা এবং প্রতিহত করার যে চেষ্টা বিএনপি করেছিলো সেটা ভুল ছিলো।’
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালেল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না সেই দোলাচলের মধ্যে থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটাও বিএনপির ভুল ছিলো। অর্থাৎ পূর্ণশক্তি নিয়ে নির্বাচন করা উচিত ছিলো। এবারও তাদের সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ সেটি তাদের যে ধারণা, সম্মুখসারির নেতাদের এই পদত্যাগ তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পদত্যাগ বিএনপির জন্য শুভ হয়নি।’
‘উকিল আব্দুস সাত্তার সাহেবের নির্বাচন করা এটাই ইঙ্গিত দেয়, বিএনপি যদি যদি ভবিষ্যতে নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয়, বিএনপির নেতারা কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। বিএনপির নেতাদের ঠেকানো যাবে না নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে।’
সরকার সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায় বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আসলেও তো উনারা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এবং ওনারা সন্ত্রাসের ওপর ভর করেই রাজনীতিটা করে। আওয়ামী লীগ জনগণের মেন্ডেড নিয়ে সরকার গঠন করেছে এবং দেশ পরিচালনা করছে। আমাদের জনগণ যতদিন চাইবে ততদিন আমরা দেশ পরিচালনা করবো। জনগণ না চাইলে আমরা একদিনও থাকবো না। বিএনপি বরং পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায় এবং পেছনের দরজা দিয়েই ক্ষমতায় গিয়েছে।’
গত এক বছর করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতেও বিশ্বব্যাপী সংকটের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গত বছর জাতির জীবনে দুটি তীলক তিনি পরিয়ে দিয়েছেন; একটি হচ্ছে পদ্মা সেতু, আরেকটি মেট্রোরেল উদ্বোধন। দেশের প্রতিটি মানুষ পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল উদ্বোধনে উদ্বেলিত হয়েছেন। সমগ্র পৃথিবী প্রশংসা করেছে।’
‘করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে যেভাবে মহামারি মোকাবিলা করেছেন সেটি বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছেও প্রশংসিত হয়েছে। নিক্কি ইনস্টিটিউট এবং ব্লুমবার্গের যৌথ জরিপ বলছে, বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে বিশ্বে পঞ্চম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম।’
বিশ্ব সংকট ও বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন এবং অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে ড. হাছান বলেন, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ইউরোপ এবং অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম হয়েছে।
বিএনপির নেতিবাচক ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি না থাকলে দেশ আরও এগিয়ে যেতো মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডিসেম্বরে মাসে রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছে এবং গত কয়েক মাসে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশ অনেক বেশি এগিয়ে যেতে পারতো যদি বিএনপি ও তার মিত্রদের নেতিবাচক রাজনীতি না থাকতো, গুজব ছড়ানোর রাজনীতি না থাকতো এবং মানুষকে বিভ্রান্ত না করে, একই সাথে বিদেশিদের পদলেহনের রাজনীতি না করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি যদি না থাকতো, আমাদের দেশ আরও বহুদুর এগিয়ে যেতে পারতো।’
‘পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরুতে নর বলি দিতে হবে বলে গুজব ছড়ানো হয়েছিলো। করোনা মাহামারির সময়ে করোনার টিকা যখন সর্বাগ্রে এনেছিলো…যখন অনেক দেশ শুরু করতে পারেনি, ১৩২টি দেশ যখন শুরু করতে পারেনি; তখন বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার টিকার ব্যবস্থা করেছিলেন। তখন কিভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছিলো! সময়ে সময়ে গুজব ছড়ানো হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশ ও বিদেশ থেকে গুজব ছড়ানো হয়, বিভ্রান্ত করা হয়।”
ড. হাছান বলেন, ‘এভাবে ষড়যন্ত্র, নেতিবাচক ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতি যদি বিএনপি ও তাদের মিত্রদের না থাকতো তাহলে আমাদের দেশ অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।’
গাইবান্ধা নির্বাচন সম্পর্তে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনই বলছে গাইবান্ধা নির্বাচন অত্যন্ত সুন্দর এবং সফল একটি নির্বাচন তারা করতে পেরেছে। আমরা দেখছি অবাধ ও সুষ্ঠু একটি নির্বাচন হয়েছে। প্রচণ্ড শীত সেখানে, এজন্য ভোটার টার্ন আউট কম হলেও সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। গতবার নির্বাচন স্থগিত না হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করতো। মানুষের মধ্যে সেখানদের ভোটারদের মধ্যে একটি হতাশা ছিলো যে, গতবার ভোট দিয়ে তারা ফল পায়নি। এবার পেয়েছে।’