এমরানা আহমেদ.
দেশের দারিদ্রপীড়িত মানুষ মূলত অসচেতনতার জন্য অন্ধত্বকে বরণ করে নেয়। অসচেতনতার জন্যই দেশের ৭ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ চোখের সমস্যায় ভোগে। অন্যদিকে দৃষ্টি সমস্যায় ভুগছে এমন মানুষের ৯০ শতাংশ নিজেদের সমস্যা সম্পর্কে সচেতন নয়। আর চশমা প্রয়োজন এমন মানুষের ৯৭ শতাংশ তা ব্যবহারই করছে না। ২০০৪ সাল থেকে মানুষের দৃষ্টিহীনদের নিয়ে কাজ করছে চাইল্ড সাইট ফাউন্ডেশন (সিএসএফ)। ২০১২ সাল থেকে ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে পরিচালিত সংগঠনটির একটি সমীক্ষায় এ তথ্য বেড়িয়ে এসেছে। সমীক্ষায় সিরাজগঞ্জ জেলার ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী তিন হাজার ৫০ জনের তথ্য নেওয়া হয়েছে। এই গবেষণার মাধ্যমে তাদের দৃষ্টি সমস্যার নানা দিক তুলে আনা হয়েছে। সমীক্ষায় আরো দেখা গেছে, দৃষ্টি সমস্যার ৮০ শতাংশ সহজে নিরাময়যোগ্য। ছানি অপারেশনের মাধ্যমে ৬০ শতাংশ মানুষের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। শুধু চশমা ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক মানুষের দৃষ্টি সমস্যা দূর করা সম্ভব।
সমীক্ষায় চশমা ব্যবহার না করার কিছু কারণ পাওয়া গেছে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-চশমা কোথায় পাওয়া যাবে, তা অনেকে জানে না। আবার অনেকের চশমা কেনার মতো আর্থিক সংগতি নেই। এ ছাড়াও নেতিবাচক ধারণার কারণেও অনেকে চশমা পড়তে চায় না।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান-চক্ষু (কর্ণিয়া) আলহাজ্ব ডাঃ সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ বলেন, চোখের প্রতিসরণজনিত ত্রুটির ক্ষেত্রে চশমাই একমাত্র ও নিরাপদ চিকিৎসা। চোখের কোনো ব্যয়াম বা ঔষুধে এ ত্রুটি দূর করা সম্ভব নয় বরং ক্রমশ তা বৃদ্ধি পায়। এ কারণে বাবা-মা, অভিভাবক, শিক্ষক, মাঠকর্মী এবং অপরাপর সকলকে এ ব্যাপারে গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি ।
চক্ষু বিশেষজ্ঞরা জানান, অধিকাংশ স্বাভাবিক মানুষ চল্লিশ বছরের কাছাকাছি এলে কাছের জিনিস পরিষ্কারভাবে দেখতে পায় না। তবে দূরের বস্তু দেখতে কোনো অসুবিধা হয় না। অর্থাৎ এ অবস্থায় কাছের ফোকাস দূরে চলে যায়। এ সময় অনেকেই নিজের অজান্তে পরিস্কার দেখার জন্য কাছের জিনিসকে আস্তে আস্তে দূরে নিয়ে দেখতে থাকে। মানুুষের দৃষ্টির প্রখরতা একটা বয়সে এসে কমতে শুরু করে। তবে কে কতটা লেখাপড়া করছে কিংবা কার কতটা কাছে বা দূরে লেখাপড়ার অভ্যাস-সেটার উপরেই কে কত বছর বয়সে এ ধরনের অসুবিধা অনুভব করবে সেটা নির্ভর করে। অতিরিক্ত গ্লাস বা কনট্রেক্স লেন্স দিয়ে কাছের জিনিসকে পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। দৃষ্টি শক্তির কোনো সমস্যা থাকলে তার জন্য প্রয়োজনীয় লেন্সের সঙ্গে কন্ট্রাক লেন্স যোগ করলেই কাছের বস্তু পরিষ্কারভাবে দেখা যাবে।
ন্যাশনাল আই কেয়ার (এনইসি) প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ফ্রেডস হলোস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জেরিন খায়ের বলেন, স্কুলে পড়ূয়া বাচ্চাদের চোখের সমস্যা বেশি হয়। তারা দূরের জিনিস ঝাপসা দেখে। তখন দেরি না করে শিশুকে অবশ্যই চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে। শিশুটি যে দূরের জিনিস দেখছে না, সে বিষয়টি স্কুলে থাকা অবস্থায় শিক্ষকদের খেয়াল করতে হবে এবং বাসায় শিশুর অভিভাবকে খেয়াল করতে হবে। শিশুর যখন দূরের কোনো জিনিস দেখতে সমস্যা হয়, মাথা হয়, চোখ দিয়ে পানি পড়বে। তখন অবশ্যই শিশুকের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তিনি আরো জানান, ২৩টি জেলায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং চোখের চমশা বিষয়ে জনগণদের সচেতনতা, প্রশিক্ষণ এবং রিকশা, বিলবোর্ড, বাচ্চাদের টিফিন বক্স, ফ্লেক্স, স্কুলের ব্যাগে ‘চমশা দিয়ে দেশি সুন্দর পৃথিবী’ কথাটি লিখে করছেন তাদের সহযোগি সংস্থাগুলোর সাথে একযুগে প্রচারণামূলক কাজটি করছেন ফ্রেডস্্ হলোস ফাউন্ডেশন।
চাইল্ড সাইট ফাইন্ডেশন (সিএসএফ) এর সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, সঠিক সময়ে চশমা না নিলে দৃষ্টি হারাবে বহু মানুষ। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চশমা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও যত দ্রুত সম্ভব চশমা বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। ১৫-৪৯ বয়সী ৫ ভাগ মানুষের এই মুহূর্তে চশমা না হলে তারা দৃষ্টিহীন হয়ে যাওয়া আশঙ্কা রয়েছে।