দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের ‘অগ্নিসন্ত্রাস এবং বর্বরতার’ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘সেই বর্বরতা দেশবাসী যেন ভুলে না যায় এবং সেই দিন যেন ফিরে না আসে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
রোববার (৬ নভেম্বর) জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ: বিএনপি-জামাতের অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের খণ্ডচিত্র’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তথাকথিত আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াত চক্রের নৈরাজ্য ও সহিংসতায় ৫ শতাধিক মানুষ নিহত এবং ৩ হাজার ৬০০ জনের বেশি মানুষ আহত হন।’
সে সময় আগুনসন্ত্রাসের শিকার হয়ে স্বামীহারা স্ত্রী, সন্তানহারা পিতা, পিতাহারা পুত্র-কন্যা, আগুনে ঝলসানো শরীর নিয়ে ভুক্তভোগীদের কয়েকজন এবং সেসব ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণকারী শরীরে বীভৎস ক্ষত চিহ্ন নিয়ে সমাজ-সংসারে অপাংক্তেয় হয়ে যাওয়া লোকজন এদিন এসেছিলেন জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার শুধু একটাই আহ্বান থাকবে দেশবাসীর কাছে, রাজনীতি করতে চাইলে সুষ্ঠু রাজনীতি করুন, আমার আপত্তি নাই। কিন্তু, আমার এই সাধারণ মানুষের গায়ে কেউ হাত দিলে তাদের রক্ষা নাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুধু দেশবাসীকে এটুকুই বলব, ওই দুঃসময়ের কথা যেন কেউ ভুলে না যায়।’
তিনি বলেন, প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি। মেধাবী ছাত্রদের হাতে অর্থ, অস্ত্র, মাদক তুলে দিয়ে বিপথে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ১৯৭৫ এর পর এই ছিল বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আসার পর স্থিতিশীলতা এসেছিল।
আগুনসন্ত্রাস মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আগুনসন্ত্রাসীদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এদের বিচার হচ্ছে, হবে এবং মহান আল্লাহর তরফ থেকেই হবে। হয়ত প্রত্যেক কেসেই (মামলা) বিচার চলছে না। কিন্তু, যারা এ ধরনের অগ্নিসন্ত্রাসে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে। অনেকের বিচারের কাজ চলছে। অনেকে শাস্তি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও পাবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা হুকুমদাত্রী বা হুকুমদাতা তাদের কথাও আপনারা ভেবে দেখেন। যারা এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারে আর মানুষকে কষ্ট দিতে পারে, আমি জানি না, মানুষ কিভাবে আবার এদের পাশে দাঁড়ায়, এদের সমর্থন করে?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা যেন কেউ ভবিষ্যতে আর ঘটাতে না পারে। কেননা, দল-মত নির্বিশেষে এদেশের প্রতিটি মানুষেরই স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে। জীবন-জীবিকার অধিকার আছে। প্রত্যেকের সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার আছে। সেই অধিকার সংরক্ষণ করাটাই আমাদের দায়িত্ব। আর সেটাই চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা নিজে স্বজনহারা, এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে ভুক্তভোগীদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান এবং তাদের জড়িয়ে ধরেন, বুকে টেনে নেন। ভুক্তভোগীদের কান্না প্রধানমন্ত্রীসহ অনুষ্ঠানে আগতদের স্পর্শ করে। আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। তাদের কাছে টেনে নিয়ে সব রকম সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা সহ্য করা যায় না। এটা কোনো মানুষ সহ্য করতে পারবে না। কাজেই, আমি দেশবাসীকে বলব, এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে।’
অনুষ্ঠানে ‘আগুনসন্ত্রাসের দুর্ভোগ: বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি-সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের আংশিক দৃশ্যপট’ শীর্ষক একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যগণ, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখন দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে এবং ক্ষমতা গ্রহণের পর জনগণের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত প্রচেষ্ঠা নিয়েছে, তখনই বিএনপি তথাকথিত আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালায় এবং একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো ধর্ষণসহ অমানবিক নির্যাতন চালায়।
প্রধানমন্ত্রী জানান যে, তিনি শৈশব থেকেই আন্দোলন করেছেন। আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, জিয়াউর রহমানের মতো সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু, আমরা অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোল বোমা হামলা করে মানুষ হত্যা করে আন্দোলন করার কথা স্বপ্নেও ভাবিনি। কারণ, মানুষ দিয়েই তো আন্দোলন। আর বিএনপি অবরোধ-হরতালের ঘোষণা দিয়ে মানুষ হত্যা শুরু করে দেয়।’