দিনাজপুর শিশু নিকেতনে বেড়ে ওঠা ৪০ জন এতিম মেয়েকে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (২৭ মে) দুপুরে দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ীর গ্রিনভিউ কমিউনিটি সেন্টারে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। এ সময় অন্যদের মধ্যে জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নুল আবেদিন, দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি রেজা হুমায়ুন ফারুক চৌধুরী শামীম, শিশু নিকেতন পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোজাফ্ফর আলী মিলন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবর্ধনা শেষে বরের জন্য একটি করে বাইসাইকেল, কনের জন্য একটি করে সেলাই মেশিন ও সংসারের আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র দেওয়া হয়।
এর আগে দুপুর থেকে বর-কনেরা সাজসজ্জা করে কমিউনিটি সেন্টারে উপস্থিত হন।
শিশু নিকেতন সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৯ সালে একসঙ্গে শিশু নিকেতনের ২০ এতিম মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে করোনার কারণে এভাবে একসঙ্গে বিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত শিশু নিকেতনটি। এখানকার বাসিন্দাদের এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা শেষে ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত শিশু নিকেতনের ১৭৪ জন মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শহরের ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত শিশু নিকেতন হোমটি পরিচালনা করে লায়ন্স ক্লাব। এখানকার ১০১ জন এতিম মেয়ের লোখাপড়ার পাশাপাশি তাদের হাতের কাজ, সেলাই ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ৪০ জন এতিম মেয়েকে আজ ধুমধাম করে উৎসবমুখর পরিবেশে বিয়ে দেওয়া হলো। ৪০ জন পাত্র ছিলেন দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার বাসিন্দা। পাত্রদের কেউ ব্যবসায়ী, কেউ পোশাক কারখানায় চাকরি করেন আবার কেউ কৃষিকাজ বা ওয়ার্কশপের দোকান কাজ করেন।
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদার গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের দর্জির দোকান রয়েছে। বিনা যৌতুকে শিশু নিকেতন হোমের এতিম মেয়ে লিজা আক্তারকে বিয়ে করেছেন।
রাজ্জাক বলেন, ‘আজ আমার মতো ৪০ জন ভাই যৌতুক না নিয়ে এতিম মেয়েদের বিয়ে করে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। আমরা যেন সুখী হতে পারি সবার কাছে সে দোয়া চাই।’
হামজাপুর গ্রামের ছেলে রবিউল ইসলামের বাবা রায়হানুল ইসলাম বলেন, যৌতুক ছাড়াই আমার ছেলেকে বিয়ে দিয়েছি। আমি চাই সব অভিভাবক এ কাজটি করুক।
আয়োজক শিশু নিকেতনের সভাপতি মোজাফর আলী মিলন জানান, শিশু নিকেতন থেকে প্রতিবছর মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। এবার একসঙ্গে ৪০ জন এতিম মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের সাইকেল, সেলাই মেশিনসহ সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেওয়া হয়েছে।