প্রিয় স্বদেশ, বাংলাদেশ। দীর্ঘ একটি পথ অতিক্রম করে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। পেয়েছি লাল সবুজের পতাকা, পেয়েছি বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পেছনে রয়েছে এক মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বীরত্ব গাথা ও ৩০ লাখ শহীদ ভাইদের তাজারক্ত এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম। আজ আমরা মুক্ত, আজ আমরা স্বাধীন।
আমরা কিছুদিন আগেই পালন করলাম স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। এবার পৌঁছে গেলাম বিজয়ের পঞ্চাশে। বাংলাদেশের বিজয়ের পঞ্চাশে তরুণ প্রজন্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর কথা হয় । তারা জানায় বাংলাদেশ ও বিজয়ের পঞ্চাশ নিয়ে তাদের ভাবনা, তাদের মতামত।
রংপুর কমিউনিটি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী আলপনা রিতু বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে অস্ত্র হাতে নিয়েছিলো একদল মুক্তিকামী মানুষ। শোষকের হাত থেকে ছিনিয়ে এনেছিলো বিজয়। আর এই ত্যাগের বিনিময়ে আজ বিজয়ের পঞ্চাশ বছরে দাঁড়িয়েছে আমাদের বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় আমাদের এই দেশটি। দেখতে দেখতে ২০২১ অর্থাৎ ৫০ বছরে পদার্পন করলো আমাদের এই মাতৃভূমি। এই ৫০ বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও গরিব বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে উন্নয়নশীল দেশে’।
রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘স্বাধীনতা কেবলই একটা শব্দ নয় বা নয় কেবলই আবেগ; এর সঙ্গে জুড়ে আছে একটি জাতির ভবিষ্যৎ। স্বাধীনতা যদিও জন্মগত অধিকার কিন্তু জন্মের পর নানা কারণে সে স্বাধীনতা হরণ হয়। আবার স্বাধীনতার অপব্যবহারও কাম্য নয়। স্বাধীনতা একজন মানুষের জীবনে কতটা প্রয়োজন তা অনুভব তখনই করা যায় যখন তার স্বাধীনতা হরণ করা হয়। খাঁচায় থাকা পাখির থেকে আমরা এটি বুঝতে পারি, স্বাধীনতার সেই মহান অর্জন শতবর্ষ জুড়ে যেনো আমরা ধারণ করতে পারি বিজয়ের পঞ্চাশে সেই কামনাই রইল’।
হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর, দীর্ঘ এ সময়ে বদলে গেছে অনেক কিছুই। ইতিহাসের পাতায় সেদিন, নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে একটা স্বাধীন দেশের জন্ম হয়েছিল। সেই স্বাধীন দেশ ও দেশের মানুষগুলো কেমন আছে এখন? ৫০ বছরের পথচলায় সবার আগে এ প্রশ্নেরই জবাব খুঁজতে হয়।
৫০ বছরে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ কিংবা ডিজিটাল বাংলাদেশের এই উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ আদতে কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা একটা ভাববার বিষয়। তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের দ্বারপ্রান্তে এই ডিজিটালাইজেশন কতটুকু গিয়ে পৌঁছেছে তাও একটা বিরাট প্রশ্ন। স্বাধীনতার ৫০ বছরে, আমরা জাতি হিসেবে কতটুকু এগিয়ে গেছি কিংবা আমাদের গনতান্ত্রিকতা ঠিক কোন স্তরে আছে সেটা ভাবতে বসলে হয়তো অনুভূতি খুব সুখকর হয় না।
একইসঙ্গে অনেকটা অস্থিতিশীলও করে তোলে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক উন্নয়নের কথা থাকলেও আদতে সাধারণ মানুষদের কাছে উন্নয়নের লাগাম অনেকটাই অদৃশ্য। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, মুক্ত গণতন্ত্র চর্চা ও সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি সহ এমন নানান বিষয়ে জরাজীর্ণ নামমাত্র গনতান্ত্রিকতা আদতে আমাদের অবস্থান তুলে ধরছে। এহেন পরিস্থিতিতে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ঠিক কতটা ফলপ্রসূ আর কার্যকারিতা বয়ে আনে তা অজানা। তবে, আমরা যাতে সত্যিকার অর্থেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বুকে লালন করে এগিয়ে যেতে পারি এই প্রত্যাশাই আজকের দিনের কাম্য’।
খিলগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল হাফিজ বলেন, কর্মসংস্থান স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ২৬ লাখ তরুণ বেকারত্বের খাতায় নাম লেখাচ্ছেন। অতি ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে রাষ্ট্রের পক্ষে সবার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। বাস্তবতার এই প্রেক্ষাপট আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়োজন এবং সম্ভাবনা দেখিয়ে দিচ্ছে যা আগামী বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে বেকারত্ব যেভাবে হ্রাস পাবে ঠিক তেমনই বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও অনেক বড় অবদান রাখবে বিজয়ের পঞ্চাশে এটাই আমার আশা।
তাদের বিজয়ের আশা, আকাঙ্ক্ষা আর মতামতের সঙ্গে মিলিয়ে আমিও বলতে চাই বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ হোক। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত হোক। এগিয়ে যাক সমৃদ্ধির পথে। বিজয়ের পঞ্চাশে শুভেচ্ছা হে প্রিয় বাংলাদেশ। জয় বাংলা।