নোয়াখালী প্রতিনিধি : সিলেটে গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত সিলেট জালালাবাদ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনিরুল ইসলাম সোহেল (৪০) এর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (২৭ মার্চ) সকাল ৯টায় তাঁর নিজ বাড়ি নোয়াখালী জেলা সদরের এওজবালিয়া ইউনিয়নের পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামের মান্নাননগর মডেল একাডেমির মাঠে জানাযা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে নিহত মনিরুল ইসলামের লাশ দাফন করা হয়েছে। তিনি পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামের ডা. নুরুল ইসলামের বাড়ির মৃত নুরুল ইসলামের দ্বিতীয় পুত্র।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়িতে শনিবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
জানা যায়, গত শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে সিলেটের শিববাড়ি এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গোটাটিকর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা সংলগ্ন পুলিশ চেকপোস্টে বোমা হামলা চালানো হয়। ওই হামলার প্রায় ঘণ্টাখানেক পর ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা একটি বোমা নিস্ক্রিয় করার সময় তা বিস্ফোরিত হলে আহত হন পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম। পরে তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত ২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
নিহত মনিরুলের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম শামীম জানান, চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে মনিরুল ছিলেন দ্বিতীয়। ২০০৩ সালে উপপরিদর্শক হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন তিনি। পরে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশের পরিদর্শক হিসেবে সিলেটের মহানগর পুলিশে যোগ দেন। মহানগর পুলিশের কোতোয়ালিসহ কয়েকটি থানায় দায়িত্ব পালন শেষে সর্বশেষ জালালাবাদ থানায় কর্মরত ছিলেন। ২০১০ সালে বিয়ে করেন মনিরুল। ১ বছর ৭ মাস বয়সী ফারাবী বিন সোহেল নামের একটি পুত্র সন্তান আছে তাঁর।
রবিবার বিকেলে নোয়াখালী জেলা সদরের মনিরুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িজুড়ে শোকের মাতম চলছে। আকস্মিক মৃত্যুর খবরে মনিরুলের স্ত্রী পারভিন আক্তার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। পারভিন আক্তার বলেন, ‘আমার এই মাছুম বাচ্চার কী হবে? কারা আমার স্বামীকে এভাবে মেরে ফেলল? আমার স্বামীর তো কোনো অপরাধ ছিল না। কেন তাঁকে এভাবে জীবন দিতে হলো? আমি সরকারের কাছে স্বামী হত্যার বিচার চাই।’
এদিকে পুত্রশোকে নিস্তব্ধ মা ফিরোজা খাতুন বার বার এদিক-ওদিক তাকিয়ে সকলের চেহারায় খুঁজছেন প্রিয় সন্তানের মুখ। কিন্তু কোথাও দেখা মিলছে না তাঁর সন্তানের চেহারা।
রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মনিরুলের লাশ তাঁর গ্রামের বাড়ি পৌঁছালে পাড়া-প্রতিবেশি ও আত্মীয় স্বজনের আহাজারিতে ভারি হয়ে যায় পুরো এলাকার আলো-বাতাস। সবাই শোকে কাতর হয়ে পড়েন সৎ, মেধাবী, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক এ পুলিশ কর্মকর্তাকে হারিয়ে।