পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কে পায়রা সেতু চালু হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে দীর্ঘ ৪০ বছরের চলতে থাকা লেবুখালী ফেরি। দৃষ্টিনন্দন সেতুটি দিয়ে যানবাহন চলাচল চালু হওয়ায় আনন্দিত সবাই।
তবে ফেরিতে দৈনিক মজুরিতে কাজ করা শ্রমিক, হকার, ভাসমান চিড়া, শরবত, আচার ও মাছ ব্যবসায়ী এবং ভাড়ায়চালিত নৌকা ও ঘাটে মোটরসাইকেল, স্থানীয়-অস্থায়ী দোকানের সঙ্গে সম্পৃক্ত দু’পাড়ের সহস্রাধিক মানুষের জীবিকা অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
আগে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ফেরির জন্য অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের কাছে বেচা-বিক্রি ও ভাড়া চালিয়ে আয় করে জীবন ও সংসার চালাতেন এসব পেশার মানুষজন। এখন সেতু দিয়ে যান চলাচল চালু হওয়ায় সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে কেউ আর ঘাটে থামছেন না।
হকারদের কেউ কেউ সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কে দোকান নিয়ে বা হেঁটে বিক্রি করলেও কয়েকদিন পরই তা বিক্রি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। তার পরও আশা আলো দেখছেন তারা। বর্তমানে বেকার সময় কাটাচ্ছেন ৬-৭টি পেশার ওপর নির্ভরশীল সহস্রাধিক মানুষজন।
অনেকেই ব্রিজের দক্ষিণ পাশে পটুয়াখালী প্রান্তে সেতু প্রকল্পে ১৪০০ মিটার নদী শাসনের আওতায় ব্লক দ্বারা বেষ্টিত করা হলে এর সৌন্দর্য উপভোগে জন্য পর্যটন ও বিনোদন প্রেমীরা আসবেন, সে আশায় অপেক্ষা করছেন। কেউ দাবি করছেন, পূর্বের মতো লঞ্চ টার্মিনাল স্থাপনের।
লেবুখালী ফেরিঘাটের ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন ও ইয়াছিন ভূঁইয়া বলেন, আমরা ছোট বেলা থেকে ঘাটে ব্যবসা করে জীবন ও সংসার চালাই। এখন আমরা একদম বেকার হয়েছে গেছি।
যেখানে দিনরাত জনসমাগম ছিল, সেখানে আজ নীরবতা। আমরা নতুন করে শুরু করতে চাই। তাই আমাদের জন্য বিকল্প কিছু করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।
মাছ ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, এখানে একটি বাজার করে দিলে আমরা নিয়মিত মাছ বিক্রি করতাম। ঘুরতে আসা মানুষ জানলে এমনিতেই সেতুর সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে মাছ কিনতেন অনেকে।
ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চালক নয়ন বলেন, আমরা দু’পাড়ে দেড় শতাধিক মোটরসাইকেল চালক ভাড়ায় যাত্রী টেনে প্রতিদিন ৮০০-১০০০ টাকা আয় করতাম। এখন তো কেউ মোটরসাইকেলে আসে না। ফলে তেমন যাত্রীও পাই না।
তবে সেতুর নিচে ফেরি ঘাটে আগের মতো লঞ্চঘাট দিলে কিছু যাত্রী আসা-যাওয়া করতেন। তাতে অন্তত আমরা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারতাম।
একই কথা বলছিলেন ট্রলারচালক আব্দুর রহিম, চিড়া বিক্রেতা সলেমানসহ ফেরিতে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে করা শ্রমিকরা।
জাতীয় শ্রমিক লীগের দুমকি উপজেলার সহ-সভাপতি ও স্থানীয় শ্রমিক নেতা আব্দুর রশীদ বলেন, ফেরির সঙ্গে সম্পৃক্ত দু’পাড়ের সহস্রাধিক মানুষের জন্য ফেরিঘাটে একটি পার্ক, একটি বাজার ও লঞ্চ টার্মিনাল স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এখানে একটি ইকো পার্ক করার সুন্দর জায়গা আছে। আগেও লঞ্চ ঘাট দিতো, সেটা পুনরায় চালু করা হোক। তাহলে অন্তত সবাই আবার ব্যবসা শুরু করতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, সেতুর পূর্ব পাশে একটি খাল আছে, সেখানে একটি ব্রিজ দেওয়া হলেও এ বাজারটি টিকে থাকতে পারতো।
এ বিষয়ে পায়রা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল হালিম বলেন, সেতুর দক্ষিণ পাড়ে ১৪০০ মিটার নদী শাসনের আওতায় ব্লক দ্বারা বেষ্টিত করা হবে। এছাড়া আমাদের এ প্রকল্পে কোনো স্থাপনা করার পরিকল্পনা নেই।
শত অনিশ্চয়তায় থেকেও নীতি নির্ধারকদের দিকে তাকিয়ে আছেন এখানকার খেটে খাওয়া মানুষজন। তাদের আশা, সরকার হাজার কোটি টাকা খরচ করে এত বড় ব্রিজ করতে পারলেও আমাদের জন্যেও কিছু করবে।