সিলেটের শিববাড়ীর ‘জঙ্গি আস্তানায়’ সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ‘আতিয়া মহল’ নামের ভবনটিতে অভিযান চলাকালে ২ জঙ্গি নিহত হয়েছে। ভবনের ভিতরে আরো একাধিক জঙ্গি অবস্থান করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রবিবার (২৬ মার্চ) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অভিযানের সর্বশেষ অবস্থা জানাতে ঘটনাস্থলের অদূরে পাঠানবাড়ি মসজিদের কাছে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, রবিবার অভিযান চলাকালে সেনাসদস্যদের গুলিতে ২ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত। এদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর নিজের শরীরে থাকা সুইসাইডাল ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটায়। নিহত দুই জঙ্গিই পুরুষ বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভবনের ভিতরে এখনো একাধিক জঙ্গি অবস্থান করছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
তবে এই অভিযানে অংশ নেওয়া সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য হতাহত হয়নি বলেও নিশ্চিত করেছেন এই সেনা কর্মকর্তা।
অভিযান চলমান থাকলেও এর সমাপ্তি কখন হবে সে ব্যাপারে জানাতে পারেননি এই সেনা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, অভিযানে ‘ভালো ঝুঁকি’ রয়েছে। আমাদের কমান্ডোরা চেষ্টা করছে। নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে অপারেশন কখন শেষ হবে। অপারেশন পরিচালনা বেশ ডিফিকাল্ট হচ্ছে। পুরো বিষয়টি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।
জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়ে গত ২৩ মার্চ গভীর রাতে ‘আতিয়া মহল’ নামের পাঁচতলা ওই বাড়িতে ঘিরে ফেলে পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত টিম ‘সোয়াট’ সেখানে পৌঁছায়। প্রথমে সোয়াট অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করে নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন স্প্রিং রেইন’। তবে পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিচারে তারা অভিযানে যায়নি।
শেষ পর্যন্ত অপারেশনের নেতৃত্ব নেয় সেনাবাহিনী। শনিবার সকালে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো ব্যাটালিয়ন।
অভিযানের প্রথম দিনে ওই বাড়িতে আটকে পড়া পরিবার সমূহকে শান্তিপূর্ণভাবেই উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। আতিয়া মহল-২ নামে একই মালিকের চারতলা বাড়ির সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের মই লাগিয়ে নারী-শিশুসহ উদ্ধার করা হয় ৭৮ জনকে।
তবে এই অভিযান চলমান থাকা অবস্থায়ই শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাতের মধ্যে ঘটনাস্থলের অদূরে দু’দফা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ পরিদর্শকসহ নিহত হন ছয়জন। র্যাবের গোয়েন্দা প্রধানসহ গুরুতর আহত হন আরও বেশ কয়েকজন।
এ অবস্থায়ই শনিবার রাত ও রবিবার সারাদিন পার হয়। সংবাদকর্মীসহ সাধারণ জনতাকে ঘটনাস্থলের অনেক দূরে রাখা হয়। তাই অভিযানের বিষয়ে এ সময় তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত রবিবার বিকেলে গণমাধ্যমের কাছে অভিযানের সবশেষ অবস্থা জানাতে উপস্থিত হন সেনা সদর দফতরের কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান।
ভিতরে জঙ্গিরা অস্ত্রে-সস্ত্রে সুসজ্জিত বলে জানান এই সেনাকর্মকর্তা। তিনি বলেন, তাদের (জঙ্গি) কাছে স্মল আর্মস আছে, এক্সপ্লোসিভ আছে, আইইডি আছে, তারা ওয়েল ইকুইপড। আমরা যে গ্রেনেড ছুঁড়েছি, তারা সেগুলো ধরে উল্টা আবার আমাদের দিকে নিক্ষেপ করেছে। টিয়ার শেল ছুঁড়লে যে আগুন জ্বালাতে হয়, তারা এসব টেকনিক জানে।
শেষ পর্যন্ত অভিযানে কি ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে তাও বর্ণনা করেন বিগ্রেডিয়ার ফখরুল। তিনি বলেন, আজ (রবিবার) সকাল থেকে বিভিন্ন টেকটিক অ্যাপ্লাই করছিলাম, রকেট লঞ্চার ব্যবহার করে হোল তৈরি করে সুবিধা হচ্ছিল না। পরে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করি। তাতে জঙ্গিরা কিছুটা অসুবিধায় পড়ে। তাদের ছুটোছুটি শুরু হয়ে যায়।
আর সেই ছুটাছুটির সময়ই গুলিতে ওই দুজন নিহত হয় বলেও জানান তিনি।
আতিয়া মহলের ভবনটি হেলে পড়েছে এমন গুঞ্জন রয়েছে। তবে হেলে পড়ার গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ভবন হেলে পড়ার খবর ঠিক নয়। ফায়ারিংয়ে সমস্যা হওয়ায় আমরা একটি দেয়াল ফেলে দিয়েছি। কোনো টিনের চালও উড়ে যায়নি।
জঙ্গি আস্তানায় কোনো গ্রুপ রয়েছে সে বিষয়টি পুলিশ বা র্যাব যারা এগুলো নিয়ে কাজ করে তারাই ভাল বলতে পারবেন বলে জানান বিগ্রেডিয়ার ফখরুল। এ ছাড়া শনিবার জঙ্গি আস্তানার অদূরে গ্রেনেড হামলা ও হতাহতের ঘটনার সঙ্গে ভবনের ভিতরে থাকা জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা এই বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেননি এই সেনা কর্মকর্তা। তিনি জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী শুধু মূল অভিযান পরিচালনা করছে। বাইরে এসব ঘটনা যারা তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন তারাই এ বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন।