শনিবার , ১৪ আগস্ট ২০২১ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. Featured
  2. অন্যান্য খেলার সংবাদ
  3. অন্যান্য ধর্ম
  4. অপরাদ
  5. অর্থনীতি
  6. অলটাইম নিউজ লেটার
  7. আইটি টেক
  8. আইন – আদালত
  9. আইন শৃংখলা বাহিনী
  10. আন্তর্জাতিক
  11. আবহাওয়া বার্তা
  12. ইসলাম
  13. উদ্যোগ এবং পরিবর্তন
  14. ওয়েবসাইট
  15. কবিতা

হারিয়ে যাচ্ছে অপরূপ সৌন্দর্যের চালতা ফুল ও পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ ফল

প্রতিবেদক
Alltime BD News24 .com
আগস্ট ১৪, ২০২১ ২:৩২ পূর্বাহ্ণ

অপরূপ, নয়নাভিরাম দৃষ্টিনন্দন ফুল ও বহুবিধ ভেষজ ঔষধিগুনসম্পন্ন  ফল চালতা। চালতা ফুলের বিকাশ ও পরিপূর্ণতা বড়ই বৈচিত্রময়।
উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীর গ্রাম বাংলা থেকে  কালের আবর্তে  হারিয়ে যাচ্ছে চালতা ফুল ও পুষ্টি গুনসমৃদ্ধ ফল।
 বর্ষা ঋতু আষাঢ় ও শ্রাবণে  চালতা ফুল ফুটে। ফুল বেশ বড় হয়, প্রায় পাঁচ ইঞ্চির ব্যাসের। সুগন্ধীযুক্ত এই ফুলে পাঁচটি মোটা  পাপড়ি থাকে। এই পাপড়িগুলোকে আঁকড়ে ধরে রাখে ফুলের বৃতি এবং এই বৃতিই মূলত ফলে রূপান্তরিত হয়।
এ ফুল সাদা রঙের।  এই ফুলের ব্যাস ১৫ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার। ফুলে পাঁচটি মোটা পাপড়ি থাকে।  বৃতিগুলো পাপড়িকে ঘিরে রাখে।
ফোটার পর ফুলে মৌমাছির আগমন ঘটে। মৌমাছিরা মধু আহরণ করতে গিয়ে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে বসে। এভাবেই চালতার পরাগায়ন ঘটে এবং ধীরে ধীরে সেটি একটি পরিপূর্ণ ফলে পরিণত হয়।
আমাদের পরিচিত টক স্বাদের চালতা ফল আসে এ ফুল থেকে। চালতা বহুবিধ ঔষধিগুনসম্পন্ন হলেও মূলত এর আচার আমাদের দেশের নারীদের জন্য দুষ্প্রাপ্য, লোভনীয় ও মুখরোচক খাবার হিসাবে ব্যাপক সমাদৃত।
 গাছ উচ্চতায় প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত হয়। শাখা-প্রশাখা অবিন্যস্ত ও প্রসারিত। সবুজ পাতা খাঁজকাটা ধরনের। সবুজের মাঝে শুভ্র চালতা ফুল বেশ আকর্ষণীয়। দীর্ঘাকার ঘন পাতার আচ্ছাদন এ ফুলকে আড়াল করে রাখে। এর বৃতির রং সবুজ, মাংসল ও স্থায়ী। মিষ্টি সুগন্ধি এ ফুলের পরাগধানী কাঁচাহলুদ রঙের পরাগকেশর মণ্ডিত। বৃতির সবুজ, দলের শুভ্রতা, পরাগের হলুদ এবং তারকাবৃতির গর্ভমুণ্ড এ ফুলকে দিয়েছে বাড়তি সৌন্দর্যময়তা।  ফুলের সৌন্দর্যময়তাই এই বৃক্ষকে দিয়েছে রূপসী গাছের মর্যাদা।
  এ বিষয় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন,’ চালতা ফুলের বৃতিগুলো দ্রুত ফলে পরিণত হয়।  এর ফুল দু-এক দিনের বেশি স্থায়ী হয় না। প্রভাতে পাপড়ি মেলে আর সন্ধ্যায় ঝরে। বেলা বাড়ার সঙ্গে রঙে পরিবর্তন আসে। নিষিক্ত ফুলই চালতা ফলে পরিণত হয়। ‘
   একটি চালতা ফলের গাছে বছরে একবারই ফল ধরে। প্রতিটি চালতা ফল স্বাভাবিকভাবে ২৫০ থেকে প্রায় ৫০০ গ্রাম ওজন হয়ে থাকে। চালতা গাছে প্রথমে ফল ধরে।
ফলের আকার যখন ডিমের আকৃতি ধারন করে তখন ওই ফলের মধ্য থেকে অপরূপ, বাহারী, বিরল ধরনের ফুল ফোটে। চালতার ফুল সাধারণত রাতে ফোটে ।
চালতা গাছে ফুল ফোটার পর একদিনের মধ্যেই ফুলের পাপড়ি নিস্তেজ হয়ে ঝড়ে পড়ে। একটি ফলে একদিনের জন্যই পরিপূর্ণ একটি ফুল ফুটে ঝড়ে যায়।
চালতার ফুল ফোটার পর মধু সংগ্রহের জন্য মৌমাছির আনাগোনা ঘটে। মৌমাছিরা চালতার ফুল থেকে মধু আহরণ করতে গিয়ে একফুল থেকে অন্য ফুলে বসে।
এভাবেই চালতার পরাগায়ন ঘটে ফুলটি ফলে পরিণত হয়ে থাকে।অতীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিষ্ময়কর ও বহুবিধ ঔষধি গুনসম্পন্ন ওই চালতা ফুল ও ফল দেখা গেলেও বর্তমানে ওই ফুল ও ফল ক্রমেই গ্রাম থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
চালতা এবং এর আচার সবার কাছেই বেশ পরিচিত। তবে গুণের দিক থেকে চালতা মোটেই হেলা করার মতো নয়।
চালতা দিয়ে প্রধানত মজার সব আচার করা হয়। চালতা পুষ্টিগুণেও সেরা এবং রূপচর্চার উপাদান হিসেবেও রয়েছে এর ব্যবহার।
 এ বিষয় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে  খাদ্য ও পুষ্টিতত্ত্ব  বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুজন মালী বলেন,’ খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম চালতায় আছে আমিষ ০.৮ গ্রাম, শ্বেতসার ১৩.৪ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম ও খাদ্যশক্তি ৫৯ কিলোক্যালরি।’
 জানা গেছে,  কচি চালতার রস চিনি ও পানিসহ শরবত করে খেলে জ্বরের প্রকোপ কমে এবং কাশির উপশম হয়।চালতার শরবত সুস্বাদু।
চালতার আচার, চাটনি, জেলি খুবই মুখরোচক। বিভিন্ন প্রকার ব্যঞ্জনে বিশেষত চিংড়ি সহযোগে টক রন্ধনের জন্য চালতা বেশ উপযোগী।
এ ছাড়া ফল শুষ্ক ও গুঁড়ো করে অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যে মসলা হিসেবে ও স্বাদবর্ধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ডাক্তার তিথি মহালদার জানায়,  চালতা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন ‘এ, ‘বি’ ও ‘সি’-এর ভালো উত্‍স।
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এই ফল স্কার্ভি ও লিভারের রোগ প্রতিরোধ করে। চালতায় রয়েছে বিশেষ ধরনের কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা জরায়ু ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করে।’
চালতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ যা বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। চালতা পেটের নানা অসুখ প্রতিরোধে সহায়তা করে।  চালতায় আয়রন রক্তের লোহিতকণিকার কার্যক্রমে সহায়তা করে। রক্তের সংবহন ঠিক রাখে। রক্তের কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে চালতা।
কিডনীর নানা রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে চালতা। চালতার বিভিন্ন উপাদান হার্টের নানা রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে। অন্ত্রে বাসা বাঁধা কৃমির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চালতা অসাধারণ ক্ষমতা রাখে।
পাকস্থলীতে যাদের আলসার আছে, তাদের জন্য উপযুক্ত ঔষুধ হতে পারে এ ফল। সামান্য গরম পানিতে চালতার রস আর সামান্য চিনি মিশিয়ে খেয়ে খেলে রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া কাঁচা চালতা পানিতে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় নিয়মিত লাগালে চুল পড়া কমে যায়।
 কাঁচা চালতার রসের সাথে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে সপ্তাহে দুবার চুলের গোড়ায় লাগালে খুশকি দূর হয়ে যাবে। এর রসের সাথে চালের গুঁড়া মিশিয়ে শরীরের  ত্বকের ওপর ব্যবহার করলে মরা কোষ পরিষ্কারের পাশাপাশি ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল ও কোমল।
(Visited ১ times, ১ visits today)

সর্বশেষ - অর্থনীতি