ইসরায়েলের নিক্ষিপ্ত বোমায় যখন ফিলিস্তিনের গাজার ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, তখন সেখান থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের বরিশালে আতঙ্ক ও উদ্বেগের প্রহর গুণছেন বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নাগরিক। তাদের কারো কারো বাড়ি এরইমধ্যে মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। অনেকের পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে।
বরিশালের এই ফিলিস্তিনি নাগরিকেরা এদেশে পড়তে আসা শিক্ষার্থী। এখানে মূলত চিকিৎসা ও প্রকৌশল বিদ্যায় পড়ছেন তারা। এরকম ৩০ জন এখন আছেন বরিশালে। এদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী চার জন।
সারা বাংলাদেশে অধ্যয়নরত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২০ জনের বেশি।
বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী এবং কলেজের মঈনুল হায়দার ছাত্রাবাসের আবাসিক ছাত্র মোহাম্মদ ইলিওয়ার বাড়ি গাজায়। তিনি সংবাদকর্মী বলেন, ‘নিরীহ মানুষকে গুলি করে মারা হচ্ছে। নারী শিশুদের ওপর বর্বর হামলা তো হচ্ছেই। এখন সাংবাদিক ও প্রেস কর্মকর্তাদের ওপরও হামলা চালাচ্ছে সন্ত্রাসী ইসরায়েল।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়ির আশপাশে অনেক বোম পড়েছে। সেখানে কোনো মানুষই থাকছে না। আমার বাবা, মা, বড় বোন, বড় ভাই ও তিন ছোট ভাই এখন আন্টির বাসায়। আমাদের বাড়ির এলাকা এখন রেড জোন। সেখাকার কী অবস্থা জানি না। খোঁজ নিতে পারছি না। গাজায় এখন কোনো কিছু্ই নিরাপদ না। আমরা ফিলিস্তিনের জন্য দোয়া চাচ্ছি।’
একই কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ আতিয়া বলেন, ‘আমার বাড়ি পশ্চিম তীরে। সেখানেও বোমা হামলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমাদের ওখানে ১১ জন শহীদ হয়েছে ইসরায়েলের হামলায়। ওয়েস্ট ব্যাংকের অবস্থাও খুব কঠিন ও খারাপ। প্রতিনিয়ত সাংবাদিক ও মেডিক্যাল স্টাফদের ওপর হামলা হচ্ছে। সিভিলিয়ানদের গুলি করে মারা হচ্ছে। আমরা এর প্রতিকার চাই। আমাদের পরিবার সেখানে বেশ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।’
বাংলাদেশে ফিলিস্তিন শিক্ষর্থীদের সংগঠন ‘ইউনিয়ন অফ প্যালেস্টাইন স্টুডেন্টস বাংলাদেশ’-এর সভাপতি ও শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র হাতেম কে ওয়াই রাবা বলেন, ‘ইসরায়েল গাজার নিরীহ নাগরিক এবং শিশুদের টার্গেট করছে। তাদের হত্যা করছে এয়ার স্ট্রাইক করে। এখন আন্তর্জাতিক কমিউনিটি কোথায়, আন্তর্জাতিক আইন কোথায়? এখানে মানবতা কোথায়? কী হচ্ছে গাজায়।
‘নর্থ গাজায় আমার বাড়ি। শনিবার আছরের নামাজের পর বোমা হামলা করে তা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। গাজায় কেউই সুরক্ষিত নয়। আমার ছোট ভাই আতঙ্কিত প্রতিনিয়ত বোমার শব্দে। আমার ছোট ভাই, বোন, বাবা ও মা চাচার বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নীরবতা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।’