শামীম আহমেদ ॥ কবি সুভাস মুখোপাধ্যায়ের সেই কালজয়ী কবিতার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আজ বলতেই হয়- ‘ফুল ফুটুক, আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত।’ আর যদি গানের সুরে সুরে বলি তবে হয়তো বলতে হয়- আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিলো নেশা/ কারা যে ডাকিল পিছে। বসন্ত এসে গেছে/ মধুর অমৃত বাণী, বেলা গেল সহজেই/মরমে উঠিল বাজি; বসন্ত এসে গেছে/থাক তব ভুবনের ধুলিমাখা চরণে/মাথা নত করে রব, বসন্ত এসে গেছে বসন্ত এসে গেছে।।
কৃষ্ণচূড়া, পলাশ ও শিমুলের বনে আগুন জ্বেলে প্রকৃতিতে অপার প্রেম নিয়ে কোকিলের মায়াবী সুরে দুয়ারে কড়া নাড়ছে ফাগুনের প্রথম দিন। টের পাওয়া যাচ্ছে, ঋতুরাজ বসন্ত এসে গেছে। তাইতো শীতের আড়ষ্টতা ঝেড়ে ফেলে আজ ঐশ্বর্যময় বসন্তের কাছে নিজেকে সমর্পণের দিন। আজ ফাগুনের মাতাল হাওয়ায় প্রিয়ার খোঁপায় গোলাপ-গাদা গুজে দেয়ার দিন।
ষড়ঋতুর শেষ ঋতু হচ্ছে বসন্ত। বসন্তকে বলা হয় রোমান্টিক ঋতু। এই বসন্তেই নাকি মনে জাগে প্রাণের কলরব। এই বসন্তেই প্রেমিক তার প্রিয়ার হাত ধরে হাঁটে, মিলনের গান ধরে। এই বসন্তেই মনে লাগে বাসন্তী রঙ, পুরোনো আর জীর্ণতা ভুলে মানুষ নতুন প্রেরণায় পথ চলে।
বসন্ত এলে মনে হয় কোনও মহৎ শিল্পী নিজ হাতে রং-তুলিতে প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তুলেছেন। গোটা প্রকৃতি যেন হয়ে উঠে রঙিন ক্যানভাস। সকাল, দুপুর নিত্যনতুন সাজে রূপের মুগ্ধতা ছড়ায় সবুজ প্রকৃতি।
তবে বসন্তের শেষটা কিন্তু আবার দখিনা বাতাসে পাতাঝরার শব্দ নিয়ে আসে। বসন্ত আসে বলে প্রকৃতি নতুন রূপে সাজার সুযোগ পায়। পুরোনো পাতারা ঝরে যাওয়ার পর গাছে গাছে গজায় কচি সবুজ পাতা। সেইসব পাতায় লেগে থাকে যেন আলোর নাচন। সবুজ, হলুদ আর লাল মিলেমিশে প্রকৃতি হয়ে উঠে এক অনিন্দ্য অপ্সরী। আর ঠিক এই সময়টাতেই সবুজ পাতার আড়ালে বসে কুহুস্বরে গান শোনায় বনের কোকিল।
বাংলা সাহিত্যে প্রেম আর মিলনের ঋতু বলা হয় বসন্তকে। বসন্ত নিয়ে কত যে ছড়া, কবিতা, আর গান রচিত হয়েছে তার কোনও অন্ত নেই। বসন্তের তরুণ-তরুণীদের পোশাকেও আসে বৈচিত্য। পোশাকে লাগে ফাগুনের আগুন ঝরানো রং।
এই ঋতুরাজ বসন্তে গাঁয়ের ঘন সবুজ বনের আড়াল থেকে একটি কোকিল তার গানে গানে কিন্তু প্রিয়তমার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। যানটজ আর ব্যস্থ জীবনের নানা বাঁকে নাগরিক কোলাহলেও কালেভদ্রে শোনা যায় কোকিলের গান। তখন আর বুঝতে দেরি হয় না- বসন্ত এসে গেছে।
১ ফাল্গুন। বসন্তের প্রথম দিনে তরুণ-তরুণীরা বাসন্তী রঙা সাজ পোশাকে, প্রাণের উচ্ছ্বাসে মিলনে-বিরহে মিলেমিশে একাহার হয়ে যাবে।
তাই কোনও অজুহাতেই আর ঘরে বসে থাকার সময় নয় আজ। আজ ফাগুনের মাতাল হাওয়ায় মনে মনে লাগুক দোলা। কবি সুফিয়া কামালের ভাষায়- “হে কবি! নীরব কেন-ফালগুন যে এসেছে ধরায়/বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?