দেশে উচ্চশিক্ষার পথে ভর্তিপরীক্ষার ক্ষেত্রে একেক বিশ্ববিদ্যালয় চলছে একেক নিয়মে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিন্ন নীতিমালা না থাকায় মেধাবীরা ভালো বিষয়ে ভর্তি হতে পারছে না। আবার প্রতিষ্ঠানগুলোও পারছে না মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে। মেধাবীদের যথাযথ মূল্যায়ন ও মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি পরীক্ষায় অভিন্ন নীতিমালা তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি অভিন্ন নীতিমালা জরুরি। তবে, নানা কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ও জনবল সংকট। তবে শিগগিরই অভিন্ন নীতিমালা তৈরির বিষয়ে ইউজিসি পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ), বাড্ডায় অবস্থিত ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ), তেজগাঁওয়ের আহ্ছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, ধানন্ডির ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই এসএসসি-এইচএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএ-এর ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থী ভর্তি নিচ্ছে।
অন্যদিকে, রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত ব্রাক ইউনিভার্সিটি, ধানমন্ডির ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব), স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, আফতাব নগরে অবস্থিত ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে। যদিও এই ভার্চুয়াল মাধ্যমে কতটা যাচাই করে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আর ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (আইইউবি) জনসংযোগ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তারা সরকারের গাইডলাইনের অপেক্ষা করছেন।
এদিকে, শিক্ষার্থী সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের ৩ ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ভর্তি নিচ্ছে। প্রথম ক্যাটাগরিতে বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভর্তি সুযোগ দিচ্ছে। এছাড়া, দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে মৌখিক পরীক্ষা এবং তৃতীয় ক্যাটাগরিতে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
জানতে চাইলে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সব সময়ই ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি নেই। তবে করোনার কারণে এবার ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারছি না। কারণ ক্যাম্পাস খোলার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ রয়েছে। আশা করি. আগামী সেমিস্টার থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবো। ভর্তি আবেদনের সময় শেষ হলেও শিক্ষার্থীরা এলে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।’
ইউআইইউ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোফিজুর রহমান বলেন, ‘দেশে এখন মহামারী চলছে। এই অবস্থায় ক্যাম্পাস খোলা সম্ভব নয়। তাই স্প্রিং-২০২১ সেমিস্টারের ভর্তি কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। আশা করি, মার্চের মধ্যে আমরা ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে পারবো। এই সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাস খোলা গেলে পরীক্ষা নেবো। ক্যাম্পাস খুলতে না পারলে এসএসসি-এইচএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএ-এর মাধ্যমে ভর্তি নেবো।’
নিজেদের ভর্তি কার্যক্রম সম্পর্কে ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এইচ এম জহিরুল হক বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমেই আমরা শিক্ষার্থী ভর্তি করি। এমনকী করোনার সময়ও পরীক্ষা নিচ্ছি। তবে সেটি অনলাইনে। সেখানে ভর্তিচ্ছুদের মৌখিক প্রশ্ন করা হচ্ছে। যাদের যোগ্য মনে হচ্ছে, তাদের ভর্তি নিচ্ছি।’
আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে এখনো ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়নি বলে বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে। শিগগিরই এই কার্যক্রম শুরু করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না গেলে আবেদনকৃত শিক্ষার্থীদের এসএসসি-এইচএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএ-এর ভিত্তিতে একটি মেরিট লিস্ট করা হবে। সেই তালিকা অনুযায়ী তারা শিক্ষার্থী ভর্তি করাবে বলে জানানো হয়।
এ বিষয়ে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিন্ন নীতিমালা তৈরি এখন সময়ের দাবি। তবে, এর জন্য সময় লাগবে। তারপরও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য অভিন্ন নীতিমালা তৈরি করা জরুরি।’ শিগগিরই ইউজিসির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার কথা জানান তিনি।