রির্পোটঃ মোঃ শাহাজাদা হিরা.
সিনিয়ার স্টাফ রির্পোটার.
বরিশাল জেলার স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস এ অঞ্চলের মানুষের বীরত্বের মহিমায় চিরো ভাস্বর । কিন্তু এই ইতিহাসের প্রতিটি পাতা রঞ্জিত পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হাজারো মানুষের রক্তে, তাদের স্বজনদের চোখের জলে। ১৯৭১-এর ৮ ডিসেম্বর বরিশাল মুক্ত হয় হানাদারদের কবল থেকে । ৯ মাসের দীর্ঘ সংগ্রামের হয় অবসান।
১৯৭১ সালের ২৫ এপিল পাকিস্তানী আর্মি ভারী অস্ত্র সস্ত্রের সামরিক বহর নিয়ে বরিশালে ঢোকে। তারা একযোগে সড়কপথ-জলপথ-আকাশপথে আক্রমান চালিয়ে বরিশাল করায়ত্ব করে। এর আগে ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে বহু অপারেশন চালিয়ে বরিশাল নগরীকে পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত রাখতে সমর্থ হয়। নগরীর সরকারী বালিকা উ”চবিদ্যালয়ে সচিবালয় ¯’াপন করে একমাস বেসামরিক প্রশাসন ও অপারেশন চালায়।
২৫ এপ্রিল বরিশাল নগরীতে প্রবেশ করে ৪ মে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস-কোয়ার্টার ঘিরে পাকিস্তানী আর্মি দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সামরিক স্থাপনা গড়ে তুলেছিল । তবে শুধুমাত্র সামরিক স্থাপনা নয় এই স্থানটি ছিল গণহত্যা নির্যাতনের অন্যতম কেন্দ্র। পানিউন্নয়ন বোর্ডের মূল অফিসে সামরিক কর্মকর্তারা অফিস স্থাপন করেন। এছাড়া এখানে তারা ৩ টি আবাসিক কোয়ার্টারে বন্দীদের ধরে এনে নির্যাতন করতো। আবাসিক কোয়ার্টারে সামিরিক অফিসাররা মনোরঞ্জনের জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে মেয়েদের ধরে এনে রাতভর নির্যাতন চালাতো বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এখানে পাকিস্থানী আর্মির হাতে নির্যাতিত বেশ কয়েকজনের বক্তব্যে পাকিস্তানি আর্মির ভয়াবহ নির্যাতন সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়।
ওয়াপদা ছাড়াও পাশ্ববর্তী ত্রিশ গোডাউন ও সংলগ্ন এলাকায় নিরীহ মানুষ ধরে এনে নির্যাতন চালানো হতো। ওয়াপদা ব্রিজ থেকে খাদ্য গুদামের আশে পাশে বিশেষ করে দিঘীর চারিপাশে লাশ-মানব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রত্যক্ষ করেছেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা। এমনকি দেশ স্বাধীন হবার পরও দিঘীর মধ্যে থেকে হাড়-গোর পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সন্তানদের লাশের অধিকাংশের ঠাই হতো সাগরদী খাল হয়ে কীর্তনখোলায়। কীর্তন খোলা তীরের এই স্থানে অগনিত লাশ দেখেছে স্থানীয় মানুষরা। এসব লাশ অনেক সময় শেয়াল কুকুরের খাদ্য হয়ে খাল-দিঘীর পাড়ে অবশিষ্টাংশ হয়ে পড়ে থাকতো।
পকিস্তানী আর্মি ভারী অস্ত্র নিয়ে এখানে অবস্থান করতো। কোন স্থানে সামরিক অপারেশনের জন্য এখানেই বৈঠক হতো। পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সংলগ্ন খালে স্পীডবোট, পাশে কীর্তনখোলার তীরে সার্বক্ষনিক গানবোট থাকতো। স্থানটিকে সুরক্ষিত করার জন্য পাকিস্থানী আর্মিরা এখানে দেয়াল উচু করে চারিদিকে অন্তত এক ডজনেরও বেশী সুরক্ষিত বাংকার তৈরী করে।পাকিস্তানী আর্মির হাতে নির্মিত এসব বাংকারের অন্তত চারটি এখনও অটুট আছে।
এসব বাংকারে রাত দিন পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর সদস্যরা পাহারায় থাকতো। মাঝে মাঝে এখান থেকে ফায়ার করা হতো। সামরিক এই স্থাপনা ঘিরে কয়েক শ’ সশস্ত্র রাজাকার পাহারা দিতো।এসব কারণে এই স্থাপনা সামনে থেকে খুব কমই লোক ও যান চলাচল ছিল। এই সড়ক এড়িয়ে অধিকাংশ মানুষ বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতো। দিনে রাতে সবসময় রাজাকাররা মানুষ ধরে এনে এখানে বন্দী করে রাখতো। বরিশাল ও বরিশালের বাইরে থেকে এখানে প্রতিদিন শতাধিক বন্দী আসতো। যাদের একটি বড়ো অংশের চিরমুক্তি ঘটত খাল পাড়ের বধ্যভূমিতে। রাতের বিভিন্ন সময় এসব বন্দীদের এনে ব্যনেট দিয়ে খুচিয়ে খুছিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য নির্যাতন চালাতো তখন অনেক সময় আর্তচিৎকারে আতংক ছড়িয়ে পড়তো। রাত হলে এখানে আটককৃত নারীদের পালাক্রমে পাক হানাদার বাহীনির নির্যাতনে ফলে চিৎকারে কেপে উঠতো এলাকা।
৮ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সমারিক কর্মকর্তারা স্টীমার ও লঞ্চ ঢাকায় পালিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত এখানে প্রতিদিন ২০-২৫ জন মানুষকে হত্যা করা হতো। এখানে কেউ ঢুকলে তার আর ছাড়া পাওয়ার অবস্থা ছিল না। পাকিস্থানী আর্মিরা ২ টি লঞ্চ যোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে পালিয়ে গেলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডে অবস্থানকারী সৈন্য ও সশস্ত্র রাজাকাররা আত্মসমর্পন করেনি। ১৯ ডিসেম্বর এই সশস্ত্র রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে নিকট আত্মসমর্পন করে।
এখানেই রয়েছে…
মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক মুক্তি কামি ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মম ভাবে হত্যা করার জন্য ব্যবহার করা সেই ব্রিজ
পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করা টর্চার সেল যেটি দ্বিতল একটি ভবনে অবস্থিত ছিলো।
মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতিত নারীদের নির্যাতনের জন্য ব্যবহারকরা সেই দ্বিতল ভবনটি এখানে রয়েছে।
পাক হানাদার বাহিনীর ব্যবহারিত ৫০টি বাফেলো বাংকার ছিলো যার মধ্যে ৪টি দৃষ্যমান আছে।
বৃহত্তর বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিয়ে আসা মুক্তি কামি বাঙ্গালীদে গণহত্যাকরার সেই স্থান ।
এখানেই আড়াই থেকে তিন হাজার মুক্তিকামি বাঙ্গালীকে পাক হানাদার বাহিনীরা হত্যা করে।
১৮ মার্চ ২০১৭ সকাল সাড়ে ৯টায় ‘যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে এসে’ চলবে চলাচলের উপযোগী করার লক্ষ্যে পরিচ্ছন্নকরণ মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সন্ধান সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণে হোক মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি উদ্ধার ও সংরক্ষণ……
ফটোগ্যালারিঃ