অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী ১৬০ বছরের পুরনো পাবলিক লাইব্রেরি। ব্যবস্থাপনার অভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর ওপর লাইব্রেরির প্রায় ৫০ শতাংশ জমিও বেহাত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সর্বশেষ পাবলিক লাইব্রেরির অচলাবস্থা ফেরাতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভা সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। এদিকে পাবলিক লাইব্রেরির সম্পত্তি রক্ষার দাবিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।
কলেজ শিক্ষক সমিতি বরিশাল আঞ্চলিক শাখা সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, পাবলিক লাইব্রেরির এক ইঞ্চি জমিও অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করা হলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের পরিচালনাধীন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য বরিশাল নগরীর বান্দ রোডে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।
তার পাশেই পাবলিক লাইব্রেরির মালিকানাধীন ৫৪ শতাংশ জমির কিছুর অংশ জলাশয় রয়েছে। সেটি ভরাট করে বিদ্যালয় ভবনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্যে গত ১৩ ডিসেম্বর রোববার রাতে পাবলিক লাইব্রেরির সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলা হয়।
পদাধিকার বলে পাবলিক লাইব্রেরি ও কালেক্টরেট স্কুলের সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন হায়দার তার সভাকক্ষে গত সোমবার সভা আহ্বান করেছিলেন। বরিশালের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা সভায় অংশগ্রহণ করে তাদের নানা মতামত দেন।
পাবলিক লাইব্রেরি ভবনের পেছনের জলাশয় ভরাট করে নির্মাণাধীন কালেক্টরেট স্কুল ভবনের বর্ধিত অংশ নির্মাণের দাবির পক্ষে-বিপক্ষে মত দেন সভায় অংশগ্রহণকারীরা। প্রায় সবাই মত দিয়েছেন, বিদ্যালয়কে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ঐতিহ্যবাহী পাবলিক লাইব্রেরিটি যেন ধ্বংস করা না হয়।
বক্তারা পাবলিক লাইব্রেরির অচলাবস্থা দূর করে সেখানে পাঠক আসার পরিবেশ তৈরির দাবি জানান।
সভায় বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুস, বরিশাল প্রেস ক্লাবের সভাপতি মানবেন্দ্র ব্যটবল, পাবলিক লাইব্রেরির অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু, মহিউদ্দিন মানিক বীরপ্রতীকসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
এদিকে পাবলিক লাইব্রেরির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনাসহ এর সম্পত্তি রক্ষার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
বেসরকারি সংস্থা গ্রিন মুভমেন্টের সমন্বয়ক কাজী মিজানুর রহমান ফিরোজ সোমবার ফেসবুকে উল্লেখ করেন, বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি বৃহত্তম বাংলার প্রাচীনতম লাইব্রেরি। এটা আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্যের গৌরব। পাবলিক লাইব্রেরি বাঁচাতে প্রশাসনসহ সকলের এগিয়ে আসা উচিৎ। কাজী বশির আহমেদ নামে একজন লেখেন- ‘ওটা চালু হলে তো মাদকের কারবার চলবে না।’
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক টুনু কর্মকার বলেন, পাবলিক লাইব্রেরি আমাদের জীবনী শক্তি। এটি নিয়মনীতি অনুসরণ করে চলবে এটাই প্রত্যাশা।
কলেজ শিক্ষক সমিতি বরিশাল আঞ্চলিক শাখা এক বিবৃতিতে জানায়, পাবলিক লাইব্রেরি সৌন্দর্যময় করতে শিক্ষক সমাজ জেলা প্রশাসনের পাশে থাকবে। কিন্তু পাবলিক লাইব্রেরির জমি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে দেয়া হলে প্রতিরোধ করা হবে।
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার বলেছেন, আমরা দুইটি প্রতিষ্ঠানই চালাতে চাই। এজন্য বরিশালের সব শ্রেণির মানুষের মতামত নিয়ে পাবলিক লাইব্রেরি চালু কালেক্টরেট স্কুলের ভবন নির্মাণ করা হবে।
তিনি বলেন, আমি খুব অল্প দিন হয়েছে এই বরিশালে জেলা প্রশাসক হয়ে এসেছি। কিন্তু জানতে পারলাম দীর্ঘ দিন ধরে পাবলিক লাইব্রেরিটি বন্ধ। কেন বন্ধ ছিল? এখন যারা এই উন্নয়নের বিরোধিতা করছে তারা তখন কোথায় ছিল। স্কুল ভবন ছাড়া সেখানে একটি মাঠ হবে। যার সুবিধা ভোগ করবে পাবলিক লাইব্রেরি ও পার্শ্ববর্তী একটি হাসপাতাল।
প্রসঙ্গত, ১৮৫৪ সালে নির্মিত বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরিটি তদারকির অভাবে ২০০৪ সাল থেকে অচলাবস্থা চলছে।