এক বছরের নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু আগে-পরে মিলিয়ে ১৬ মাসেরও বেশি সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকতে হয়েছিল সাকিব আল হাসানকে। অবশেষে ভক্তদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ২০ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবার ফিরে এলেন দ্য চ্যাম্পিয়ন, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
এসেই নিজের জাত চেনালেন। বল হাতে মায়াবি ঘূর্ণিতে মুর্তিমান আতঙ্ক হলেন। ৭.২ ওভার বল করে মাত্র ৮ রান দিলেন। নিলেন ৪ উইকেট। খুবই কৃপণ, অথচ কতটা বিধ্বংসী! সাকিব আল হাসান যেন মাঠে ফিরলেন ‘সাকিব আল হাসানে’র মতোই। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও উঠলো তার হাতে।
দ্বিতীয় ম্যাচে বল হাতে নিলেন ২ উইকেট। মেহেদী মিরাজ আজ জ্বলে উঠেছিলেন। সে তুলনায় বল হাতে আগের ম্যাচের চেয়ে কিছুটা নিষ্প্রভ। তাতে কি, ব্যাট হাতে পুষিয়ে দিলেন। ৫০ বল খেললেন। ৪৩ রান করে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। ৭ উইকেটের জয়ের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক সিরিজ জয় উপহার দিলেন তিনি।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে মুশফিকুর রহীমকে সঙ্গে নিয়ে গড়েছিলেন ৪০ রানের জুটি। জুটিতে খেলেছেন মোট ৪৯ বল (৮.১ ওভার)। ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে যেখানে সিরিজ উদযাপন হওয়ার কথা, সেখানে সাকিব পুরোপুরি পেশাদার। নিজেকে ফিট রাখার কী প্রাণান্ত চেষ্টা। ম্যাচ শেষে তাই ফিটনেস ঠিক করতে আরও কয়েক রাউন্ড দৌড়ালেন মাঠের মধ্যে।
মাঠে দর্শক প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) ৭/৮জন সদস্য। তাদের একজন এনআই মিঠু। ম্যাচ শেষে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে খুব কাছ থেকে একটি ভিডিও করলেন তিনি। যেখানে দেখা যাচ্ছে, ম্যাচ শেষেও মাঠে দৌড়াচ্ছেন সাকিব আল হাসান। সঙ্গী ছিলেন তাইজুল ইসলাম, সৌম্য সরকার এবং আরও একজন।
প্রসঙ্গতঃ তাইজুল সেরা একাদশে ছিলেন না। সৌম্য একাদশে থাকলেও ব্যাট করতে নামতে হয়নি। ফিল্ডিং করেছেন শুধু। সে ক্ষেত্রে সৌম্য-তাইজুলদের ফিটনেস ধরে রাখতে আলাদা পরিশ্রম করাটা স্বাভাবিকই।
কিন্তু বল হাতে যিনি পুরো ১০ ওভার বোলিং করলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা ৪৩.৪ ওভার মাঠে উপস্থিত ছিলেন, ব্যাট হাতে করলেন ৫০ বলে ৪৩ রান- সেই সাকিব আল হাসানের বিশ্রামই তো নেয়ার কথা; কিন্তু তিনি তা না করে ম্যাচ শেষে আবারও মাঠে হাজির। নিজের ফিটনেস ঠিক রাখার আসল কাজটি ঠিকই করে নিলেন।
এই হলেন সাকিব আল হাসান। যিনি, ২০১৯ সালে আইপিএল খেলতে গিয়ে যখন সানরাইজার্সের একাদশে সুযোগ পাচ্ছিলেন না, তখন দেশ থেকে গুরু সালাউদ্দিনকে নিয়ে গিয়ে স্পেশাল ট্রেনিং করলেন। নিজের ফিটনেস ঠিক রাখলেন। যার ফল বাংলাদেশ পেয়েছিল ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে। ২ সেঞ্চুরি আর ৫ হাফ সেঞ্চুরিতে ৮ ম্যাচে করেছিলেন ৬০৬ রান। বল হাতে উইকেট নিয়েছিলেন ১১টি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে যা আর কেউ কখনো করে দেখাতে পারেননি।
মাঠের বাইরে তাকে ঘিরে অনেক আলোচনা বিরাজমান। অনেক বিতর্কও তৈরি হয়। কিন্তু মাঠের সাকিব সম্পূর্ণ আলাদা। নিজেকে উজাড় করে দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকেন তিনি। যার প্রমাণ দেখা গেলো আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচটি শেষ হওয়ার পরও।