শামীম আহমেদ: বরিশালে পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনায় লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। একই সাথে নগর গোয়ান্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিনের বাস ভবনে ইট-পাটক্কেল নিক্ষেপ করে জানালার গ্রাস ভাংচুর করা হয়।
আজ রোববার সন্ধায় বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের সাগরদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় বরিশাল নগরীর ছোট ছোট যানবাহন ছাড়াও দুরপাল্লার যাত্রী ও পন্যবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে বিক্ষোভকারীরা লাশ নিয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিনের ২৪ নং ওয়ার্ড শের-ই-বাংলা সড়কস্থ বাস ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এক পর্যায় তারা ওই বাস ভবনে ইট পটক্কেল নিক্ষেপ করে জালানার গ্রাস ভাংচুর করে।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা বরিশাল নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানায়।
সন্ধ্যা ৬টায় পর কোতয়ালী থানা পুলিশ পরিস্থিত শান্ত করলে যান চলাচল শুরু হয় বলে জানান কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, পুলিশের নির্যাতনের যে অভিযোগ উঠেছে তা ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, ময়না তদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু তারা লাশ নিয়ে সড়কে অবস্থান নেয়। এতে করে জনদূভোগ সৃস্টি হয়। সন্ধ্যা ৬টা পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ বাড়ি সংলগ্ন সাগরদী হামিদ খান সড়কের একটি চায়ের দোকানে বসা ছিলো রেজাউল করিম। রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মহিউদ্দিন তাকে মাদকের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করে। তার কাছ থেকে ১৩৮ গ্রাম গাঁজা এবং ৪পিস নেশাজাতীয় ইনজাকশন উদ্ধারের দাবী করে ওই দিন রাত সাড়ে ১১টায় কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা করেন মহিউদ্দিন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পরদিন শুক্রবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করে পুলিশ। তার শারিরক অবস্থা খারাব হওয়ায় ওই দিন রাতেই তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রেরণ করা হয়। অতঃপর অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে শনিবার গভীর রাতে সে মারা যায়।
এদিকে পুলিশের নির্মম নির্যাতনের পর অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে যুবকটির মৃত্যু হয়েছে বলে তার পরিবারের দাবী। রেজাউল কমির রেজার পিতা মোঃ ইউনুস মিয়া বলেন, বরিশাল ডিবি পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন তার ছেলেকে থানায় ধরে নিয়ে যায় মাদকসেবী বলে। এরপর রেজাকে ডিবি কার্যলয়ে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালায়। এরপর আর ছেলের খোজ পাওয়া যায় নি। শুক্রবার রাতে (১ জানুয়ারী) হাসপাতাল থেকে ফোন করে বলা হয় তার ছেলে প্রিজন সেলে ভর্তি আছেন, তার প্র¯্রাবের রাস্তা থেকে অতিরিক্ত রক্ত বেড় হচ্ছে। ওই দিনই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রেজাকে দুই ব্যাগ রক্তও দেয়া হয়। অতঃপর রেজা মারা যায়।
এরই প্রতিবাদে এলাকাবাসী বিক্ষোভ করেন।
অপর দিকে বরিশাল কেন্দ্রিয় কারাগারের জেলার মো. শাহ আলম বলেন, রেজাউল করিমকে শারীরিক ক্ষত নিয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট কারাগারে পাঠানো হয়েছিলো বলে জানিয়েছে বরিশাল কেন্দ্রিয় কারাগারের জেলার। আদালতের নির্দেশে তাকে প্রথমে কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে শুক্রবার (পহেলা জানুয়ারী) রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে শের-ই বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধঘীন অবস্থায় গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে মৃত্যু হয় রেজাউল করিমের। তার মৃত্যুর কারন হিসেবে স্ট্রোক উল্লেখ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনা তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ও অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান।
উল্লেখ্য নগরীর ২৪ নং সাগরদী এলাকার আঃ হামিদ খান সড়কের বাসিন্দা ও মোঃ ইউনুস মিয়ার ছেলে মৃত্যু রেজাউল করিম রেজা (৩০)। সে সদ্য এলএলবি পাশ করে বরিশালের আদালতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। তার পিতা নগরীর সাগরদী বাজারের মাংশ ব্যবসায়ী। তারা দুই ভাইয়ের মধ্যে সে বড়। তার স্ত্রী রয়েছে।