বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেজাউল করিম (৩০) নামে এক হাজতির মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২ জানুয়ারি) রাত ১২টা ৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। এদিকে পুলিশের নির্মম নির্যাতনের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারের দাবী।
রেজা নগরীর ২৪ নং সাগরদী এলাকার আঃ হামিদ খান সড়কের বাসিন্দা ও মোঃ ইউনুস মিয়ার ছেলে। মৃত রেজা সদ্য এলএলবি পাশ করে বরিশালের আদালতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল।
হাসপাতালের পরিচালক বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি না হলেও অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান।
রেজার বাবা মোঃ ইউনুস মিয়া বলেন, গত ২৯ই ডিসেম্বর মঙ্গলবার বরিশাল ডিবি পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন তার ছেলেকে মাদকসেবী বলে ধরে নিয়ে যায়। এরপর রেজাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালায়। এরপর আর ছেলের খোঁজ পাওয়া যায়নি। শুক্রবার (১ জানুয়ারী) হাসপাতাল থেকে ফোন করে বলা হয় তার ছেলে প্রিজন সেলে ভর্তি আছেন। তার প্রসাবের রাস্তা থেকে অতিরিক্ত রক্ত বের হচ্ছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রেজাকে দুই ব্যাগ রক্তও দেয়া হয়। অতঃপর রেজা মারা যায়। এসআই মহিউদ্দিনের নির্যাতনের তার ছেলে মারা গেছে বলে তিনি দাবী করেন।
মৃত্যু রেজার ফুপাতো ভাই ও স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ মাহফুজ হোসেন বলেন, এসআই মহিউদ্দিনের বাড়ী একই এলাকায়। সে দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় পুলিশের ক্ষমতা দেখিয়ে যাকে তাকে মারধর করে। ২৯ই ডিসেম্বর নিরহ ও ভদ্র যুবক রেজাকে ধরে ওর কাছে সিরিঞ্জ ও প্যাথেডিন পেয়েছে দাবী করে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালায়।
এ বিষয়ে নিহত রেজাউল করিমের ভাই আজিজুল বলেন, তারা হাসপাতাল পুলিশের পক্ষ থেকে ফোন পেয়ে তাকে দেখতে যাওয়ার পরও তার কাছে ভিড়তে দেয়নি কারারক্ষিরা। শুধু মেডিসিন কিনে এনে দিলে তারা নিয় যেত। এছাড়া রেজাউলের স্ত্রী পাশে থাকলেও সে অসুস্থতার কারনে কোন কথা বলতে পারেনি।
এ ব্যাপারে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোঃ শাহ আলম জানান, আমাদের এখানে যখন হাজতী হিসাবে আসে তখনই সে শারিরীক অসুস্থ ছিল ও বা পায়ের কুচকিতে ক্ষত ছিল। এরপর আমরা আমাদের এখানে নিয়ম অনুযায়ী চিকিৎসা-সেবা দিয়ে থাকি। তারপরও তার অবস্থা উন্নতি না হওয়ার কারনে ১লা জানুয়ারী শের-ই বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরন করি।
অপরদিকে কোতয়ালী মডেল থানান ডিউটি অফিসার রুম্মান জানান, ২৯ই ডিসেম্বর রাতে মেট্রো ডিবি এস আই মহিউদ্দিন ১’শ গ্রাম গাজা, এমপুল ইজিয়াম (২), ইনজেকশনসহ থানায় হাজির হয়ে মাদকদ্রব্য আইনে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে।
দুপুর ১২টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আঃ হাই রেজাউলের সুরুতহাল করেন। অপরদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে ২৪ নং ওয়ার্ডের স্থানীয়রা বিক্ষোভ করেছেন। তারা বিষয়টি সুষ্ ু তদন্তের দাবী জানিয়েছেন।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ওসি মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সুরাতহাল শেষে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে ঘটনা যাই ঘটুক না কেন বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে। এ অবস্থায় স্থানীয় জনগণকে কোন বিশৃঙ্খলা সৃস্টি করতে দেয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন।