বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করার অভিযোগে আটক শতবর্ষী আব্দুল্লাহহিল বাকীকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আব্দুর রউফের জিম্মায় তাকে জামিন দেওয়া হয়। জামিনের শর্ত অনুযায়ী তাকে ঢাকায় অবস্থান করতে হবে এবং মামলার নির্ধারিত তারিখে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে হবে।
বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রবিবার (১৯ মার্চ) এই আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, সাইদুর রহমান ও রেজিয়া সুলতানা চমন। অপরদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন মো. আব্দুর রউফ ও অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। এ সময় চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আব্দুল্লাহহিল বাকীর বয়স ১০০ বছরের উপরে। শারীরিকভাবেও অসুস্থ। এই কারণ দেখিয়ে আসামী পক্ষ জামিন আবেদন করলে আদালত তা বিবেচনায় নিয়ে একজন আইনজীবীর (মো. আব্দুর রউফ) জিম্মায় তাকে জামিন দিয়েছেন।’
গত ৮ মার্চ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ১৭ মার্চ দুপুরে আব্দুল্লাহহিল বাকী’র বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। তবে গুরুতর অসুস্থ থাকায় তাকে অলিপুরের ওই বাড়িতে পুলিশ পাহারায় রাখা হয়েছিল। রবিবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য শনিবার রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে পুলিশের একটি দল ঢাকায় নিয়ে আসে। রবিবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে বয়স বিবেচনায় বাকীকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন আদালত।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আটক হওয়ার পর প্রথম আসামী হিসেবে বিএনপি নেতা মরহুম আব্দুল আলিমের জামিন মঞ্জুর করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর দ্বিতীয় কোনো আসামির জামিন মঞ্জুর করা হল এবার।
আব্দুল্লাহহিল বাকী ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির সাতক্ষীরার সেক্রেটারি পদে ছিলেন। তার দুই স্ত্রীর মধ্যে ছোট স্ত্রী শাজেদা বেগম বেঁচে আছেন। তবে তিনিও অসুস্থ। দুই স্ত্রীর ঘরে ৯ জন মেয়ে ও ৩ জন ছেলে রয়েছে তার।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি আব্দুল্লাহহিল বাকীসহ চারজনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। মামলার অন্য আসামিরা হচ্ছেন- সাতক্ষীরা জেলার খলিলনগর থানার বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুল খালেক মন্ডল (৭২), খান রোকনুজ্জামান (৬৪) এবং জহিরুল ইসলাম ওরফে টেক্কা খান। এর মধ্যে আব্দুল খালেক মণ্ডল আগেই গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায় ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট তদন্ত শুরু হয়। প্রায় দেড় বছর পর এই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হলো। এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৬০ জনকে।
uf