উৎপাদনমুখী শিল্প-বাণিজ্য প্রসারের মধ্য দিয়ে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে নারী সমাজ। তাই নারীরা আজ উন্নয়নের সহযাত্রী বলা চলে। বাংলাদেশের নারীরা অন্যান্য পেশার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেও সফল হচ্ছে। এর ফলে নতুন নতুন কর্মস্থল সৃষ্টি ও তাদের সাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্র ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে উইমেন এন্ট্রাপ্রিনিওয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (উই) আয়োজিত ‘নারী উদ্যোক্তার সাফল্যে পুরুষের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তরা এসব কথা বলেছেন।
সেগুন বাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) রাউন্ড টেবিল মিলনায়তনে রবিবার (১৯ মার্চ) দুপুরে এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
উই’র প্রেসিডেন্ট মিসেস নাসরিন রব রুবা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিধি ও বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান ট্যাপা ও কর কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন ।
গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন কমিটির আহ্ববায়ক ড. নাদিয়া বিনতে আমিন। নির্বাহী কমিটির সদস্য নিলুফার করিমের সঞ্চালনে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাজমিন সুলতানা, নির্বাহী কমিটির সদস্য আয়েশা সিদ্দীকা প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্যে ড. নাদিয়া বিনতে আমিন বলেছেন, ‘নারীরা আজ উন্নয়নের সহযাত্রী। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সমাজের প্রায় সর্বক্ষেত্রে নারীরা অবদান রেখে চলেছে। অনেক বাধা পাড়ি দিয়ে লড়াই করে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে স্বাধীনতা পরবর্তী ৪৫ বছরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নারীরা তাদের কর্মদক্ষতার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পেরেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, পুলিশ, সেনাসদস্য, জনপ্রশাসনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বৈমানিক, বিচারক, খেলোয়াড়, এমনকি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের চূড়াতেও নারীর পদচারণা লক্ষ্যণীয়।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ দৈনিক ১২ ঘন্টা পরিশ্রম, নিম্ন মজুরি, অমানুষিক নির্যাতন ও খাদ্যের অভাবের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকরা রাস্তায় বিক্ষোভ করেন। এতে অনেকেই গ্রেফতার ও হয়রানির শিকার হন। সেই থেকে শুরু দিনবদলের পালা। তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের ৮ই মার্চে তারা নিজস্ব ইউনিয়ন গঠন করেন। ১৯০৮ সালের ৮ মার্চ বিপুলসংখ্যক নারী শ্রমিক স্বল্প শ্রমঘন্টা, ন্যায্য মজুরি এবং ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এ ঘটনার দুবছর পর ১৯১০ সালের ৮ মার্চ ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত সাম্যবাদী নারীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৮ মার্চকে নারী দিবস ঘোষণা করা হয়। আর এর প্রস্তাবকারী ছিলেন জার্মান কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেত্রী ক্লারা জেৎকিন। ৬৪ বছর পর ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকেই জগতজুড়ে নারীরা এগিয়ে চলেছে।’
গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্য বক্তরা বলেছেন, ‘একজন নারীর পেশাগত সফলতার পেছনে পুরুষেরও যথেষ্ঠ সহযোগিতা রয়েছে। কেননা পুরুষের সহযোগিতা ছাড়া কোনোভাবেই নারীর একার পক্ষে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব নয়। এ ছাড়া দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ হচ্ছে নারী। তাই এই জনশক্তিকে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে উন্নয়নের স্বার্থে কর্মমুখী করার প্রয়োজন রয়েছে। ফলে নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি পুরুষের হাত যত বেশি প্রসার হবে তারা সমাজের প্রতি তত বেশি অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।’