রির্পোটঃএইচ আর হীরা ।।
মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত কীর্তনখোলার পাড়ে ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন টর্চার সেল, বাংকার, ব্রীজ‘র চিত্র এখন পুরোটাই পাল্টে গেছে। শনিবার জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে শুরু হয়েছে পরিচ্ছন্নতা অভিযান। সকাল থেকেই চলছে স্মতিবিজড়িত এলাকায় অবস্থিত ব্রীজটির সাথে যোগাযোগ রক্ষার আয়োজন। জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। তারা যে যেভাবে পারছেন সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। পরিচ্ছন্নতা অভিযানের শুরু করেন জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান নিজেই। তিনি ধারালো দা দিয়ে অনেক আগাছা পরিষ্কার করেন। যা দেখে সেখানে উৎসুক জনতাও ভীড় জমায়। ব্রীজের পাশে থাকা বেশ কয়েকটি গাছেল ডালপালা কাটছিলেন জেলা প্রশাসক নিজেই। উৎসুক জনতা জেলা প্রশাসকের এমন কার্যক্রম দেখে হতবাক হন। তারা একে অপরের সাথে বলাবলি করছিলেন ‘ডিসি স্যারের আবার হাতে দা নেয়া লাগে তিনি অর্ডার করলেইতো কতকিছুই সম্ভব’। অপরজন প্রতিত্তোরে বললেন ‘এ ডিসি সে ডিসি না’। বরিশালে আমরা এমন মানুষ পেয়েছি যাকে হারালে দ্বিতীয়জন আর এমন হবেনা। ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বরিশাল জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত সমস্যা ও সম্ভাবনা গ্রুপে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো “এই সেই ব্রিজ যার রেলিংয়ের পার্শ্বে এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ও নিরীহ মানুষকে পাক হানাদার বাহিনীরা বেধে রেখে ব্যায়ানট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরে নিচে ফেলেছে। এই ব্রীজটি রুপাতলী, সাগরদী ও ধান গবেষনার এক পাশ অপর পাশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ওয়াপদা কলোনি। এর দুই পাশেই যথেষ্ট পরিমান ব্রীজটিতে যাতায়ের জন্য সরকারী সাগরদী খালেরই জমি আছে। অথচ ওয়াফদার পাশ দিয়ে সেই জমিতে অনেক ঘরবাড়ী নির্মান করা হয়েছে যা গাছ গাছালির জন্য দেখা যায়না। যেখানে আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধের এত মর্মাহত স্মৃতি এই ব্রীজটিতে রয়েছে সেটা আমরা জনগন দেখতে ও যেতে পারছিনা। মাননীয় ডিসি স্যারের নিকট আকুল আবেদন থাকবে এই যে এই ব্রীজটি সংস্কার হোক বা না হোক এখনও ব্রীজটি মজবুত আছে। তাই আমাদের প্রজন্মকে এবং জনগনকে এই ব্রীজটি দেখতে দর্শনার্থী যেন ওখানে যেতে পারে। সাগরদী খালেরই অংশ এটার দুই পাশেই সড়ক তৈরির জন্য পর্যাপ্ত জমি আছে। তাই আবেদন এই যে খৃষ্টান কলোনির ব্রিজ থেকে ওই ব্রীজটির দূরত্ব বেশি নয় এই টুকু সড়ক স্যার আপনার উদ্যোগে করা হলে সারাজীবন বরিশালের জনগন ও আগামী প্রজন্ম আপনাকে স্মরন করবে এবং এই ব্রীজটির ইতিহাস সবাই মনে রাখবে। সড়কটি করা একদম সহজ ওয়াপদা কলোনীর গাইড ওয়ালের পাশে অবৈধ কয়েকটা ঘর উচ্ছেদ করলেই সড়ক তৈরি করা একদম সহজ হবে স্যার”। স্ট্যাটাসটি দেয়ার পরে শত শত মানুষ ইতিবাচক মন্তব্য করেন। এর পরই উদ্যোগ নেন জেলা প্রশাসক। গত ১৬ মার্চ প্রথমে কিছু শ্রমিক নিয়োগ করে ওই ব্রীজের কাছে যাওয়ার সড়কটি চলাচলের উপযোগী করার পাশাপাশি একটি বাশের সাঁকো তৈরী করা হয়। শনিবার চূড়ান্তভাবে শুরু হয় রক্ষণঅবেক্ষন কার্যক্রম। কয়েকদিন পূর্বেও সেখানে মানুষ যেতে পারতো না, জঙ্গল দেখলে ভয় হতো আজ সেই জায়গাটি এখন চকচক করছে।