জীবনে তাকে বহু লড়াই করতে হয়েছে। যৌবনে মঞ্চ নাটকে ক্যারিয়ার গড়ার লড়াই। জীবীকার তাদিগে একটা ভালো চাকরির লড়াই। অবশেষে রেডিও’র উপস্থাপক হয়ে সেটি ছেড়ে দিয়ে সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে চলচ্চিত্রে যাওয়ার লড়াই, উত্তমকুমারের বলয় ভেঙে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার লড়াই, উত্তমমুখী পরিচালক-নায়িকা তথা ইন্ডাস্ট্রিকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার লড়াই, বম্বের বাঘা বাঘা সব অভিনেতাদের ভিড়ে নিজের সিনেমাকে সেরা করার লড়াই, অভিনেতা, কবি-আবৃত্তিকার ও চিত্রশিল্পী হিসেবে নিজের এত এত গুণের ভেতর থেকে অভিনেতা সত্তাকে প্রাধান্য দেয়ার লড়াই, জীবনের বেলাশেষে এসেও তরুণ সব অভিনেতাদের সঙ্গে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণের লড়াই, সংসারের লড়াই!
লড়াকু সৌমিত্র লড়াই করে গেলেন মৃত্যুর সঙ্গেও। দীর্ঘ ৪০টা দিন। ১৯৩৫ সালে জন্মানো এই বটবৃক্ষ তার শিকড় কিছুতেই যেন তুলে ফেলতে দিতে চাননি যমদূতকে। নির্জীব হয়েও হাসপাতালের বিছানায় লড়াই চালিয়ে গেছেন।
চিকিৎসকরা বারবার তাকে নিয়ে আশা হারিয়েছেন। বারবার ছড়িয়েছে সৌমিত্রের মৃত্যু খবর। তবুও ফিরেছেন তিনি। বারবারই আশা জাগিয়েছেন আবারও সুস্থ হয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেন বলে। তবে আয়ু যার শেষ, তার সব লড়াই বৃথা। সেটাই প্রমাণ হলো আজ ১৫ নভেম্বর দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে। থেমে গেলেন সৌমিত্র।
এ হার মানা নয়। বরং নতুন জীবনের কাছে ফেরার। নতুন কোনো পৃথিবীতে। বাংলা সিনেমার মহাতারকা, অভিনেতা-নাট্যকার-বাচিকশিল্পী-কবি-চিত্রকর সৌমিত্র সেখানে যেন ভালো থাকেন।