প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নতুন নতুন দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে তুলতে আমরা কোস্ট গার্ডকে একটি যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি।’
রোববার বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের দু’টি অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল, পাঁচটি ইনশোর প্যাট্রোল ভেসেল, দু’টি ফাস্ট প্যাট্রোল বোট এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বেইস, ভোলার কমিশনিং প্রদানকালে দেয়া ভাষণে তিনি একথা বলেন।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে মূল অনুষ্ঠানস্থল চট্টগ্রামের কোস্টগার্ড বার্থ পতেঙ্গা’র সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা এবং সামুদ্রিক জলসীমার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, মৎস্যসম্পদ রক্ষা, দেশের সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তা বিধান, চোরাচালান ও মাদকবিরোধী অভিযান, ডাকাত দমনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় জনগণের জানমাল রক্ষায় কোস্ট গার্ডের ভূমিকা উত্তরোত্তর বাড়ছে।
‘জাটকা নিধনরোধে এবং মা ইলিশ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের প্রশংসনীয় ভূমিকা রয়েছে,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষে কোস্টগার্ডের বহরে এই নৌযানগুলো যুক্ত হওয়া সংস্থাটির জন্য একটি নতুন অধ্যায় সূচিত করেছে। কারণ, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চল টহলে রাখাটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তার সরকারের সময়ে কোস্ট গার্ডের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত প্রায় ১২ বছরে কোস্ট গার্ডে’র জন্য বিভিন্ন আকারের ৫৫টি জাহাজ ও জলযান নির্মাণ করা হয়েছে। তিনটি প্রকল্পের আওতায় কোস্ট গার্ডে’র বেইসসমূহের কর্মকর্তা ও নাবিকদের বাসস্থান, অফিসার্স মেস, নাবিক নিবাস ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি, পটুয়াখালী অঞ্চলে নিজস্ব প্রশিক্ষণ বেইস ‘বিসিজি বেইস অগ্রযাত্রার’ মাধ্যমে কোস্ট গার্ডের জনবলের প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ বাহিনীর সদস্যরা স্বল্পতম সময়ে সুবিশাল সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকার মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে।’
কোস্টগার্ড সদস্যদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, কোস্ট গার্ডের বিভিন্ন জাহাজ ও ঘাঁটি কমিশনিংয়ের মাধ্যমে এ বাহিনীর সক্ষমতা আজ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। আস্থা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এসব জাহাজ ও ঘাঁটি কোস্ট গার্ড সদস্যদের পেশাগত উৎকর্ষ, মানসিক বিকাশ ও উন্নত মনোবল অর্জনে যুগান্তরকারী ভূমিকা রাখতে সমর্থ হবে।’
তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, দেশপ্রেম, সততা ও ঈমানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন, কোস্টগার্ডের সুনাম যেন সবসময় বজায় থাকে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। এই বাহিনীর ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং আপনাদের সার্বিক কল্যাণে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা সরকার দিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রীকে অনুষ্ঠানে কোস্টগার্ডের একটি সুসজ্জিত চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. আশরাফুল হক অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে অধিনায়কগণের হাতে ‘কমিশনিং ফরমান’ হস্তান্তর করেন। নব্য কমিশনিংকৃত ৯টি জাহাজের ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্র ও পরিবেশিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ২০১৪ সালে ইতালি সফরের সময় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডে’র সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তিনি ইতালি সরকারের যে সহযোগিতার কামনা করেন তারই অংশ হিসেবে পরবর্তীকালে জি-টু-জি চুক্তির মাধ্যমে ইতালি নৌবাহিনীর চারটি করভেট প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মাধ্যমে অফশোর প্যাট্রোল ভেসেলে রূপান্তরিত করে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যার দুটি বিসিজিএস তাজউদ্দীন ও বিসিজিএস সৈয়দ নজরুল জাহাজ দু’টি ২০১৭ সালে তিনি কমিশনিং করেন। ইতালি হতে সংগৃহীত আরও দু’টি অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল-বিসিজিএস মনসুর আলী এবং বিসিজিএস কামারুজ্জামান আজ কমিশনিং হলো।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড ও খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত আজকের কমিশনিং করা ইনশোর প্যাট্রোল ভেসেল এবং ফাস্ট প্যাট্রোল বোটগুলো।’
‘অর্থাৎ আমরা নিজেরাও তৈরি করতে পারি, সেটারই আজ প্রমাণ পেলাম। আজকে আমাদের কাজে লাগলো। আগামীতে আমরা রফতানিও করব ইনশাআল্লাহ’-যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশীয় শিপইয়ার্ডে তৈরি এ জাহাজগুলো কোস্ট গার্ডের অপারেশনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। পাশাপাশি, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় ও নদীপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিসিজি বেইস ভোলারও আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ।