মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের কমিশন। এছাড়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি সাংবাদিক ও ত্রাণকর্মীদের উপদ্রুত এলাকায় অবাধে যেতে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন বিশেষ কমিশন যখন তাদের অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে তখনো কয়েক লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে অবস্থান করেছে। সাময়িক আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা এসব শরনার্থীদের বাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে এসব ক্যাম্প বন্ধের সুপারিশ করেছে কমিশন।
বাংলাদেশের সীমান্তের লাগোয়া রাখাইনের সব জনগোষ্ঠীর অবস্থা, সেখানকার সহিংসতা, বাস্তুচ্যুতি এবং উন্নয়নে পিছিয়ে থাকার কারণ খুঁজে নিয়ে তা বিশ্লেষণের জন্য মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর আং সান সুচি ওই কমিশন গঠন করেন। কফি আনানের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের ওই কমিশনের ছয়জন মিয়ানমারের বিশিষ্ট নাগরিক।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান প্রতিবেদনের বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘এখন সময় হয়েছে শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনার। আর সেই সাথে তাদের নাগরিকত্বের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবার।’
রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যের সব জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব নিশ্চিতে দেশটির সরকারের কাছে একটি সমন্বিত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রাখা হয় রিপোর্টে।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্র দফতরের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আই আই সোয়ে বলেছেন যে, সরকার এই কমিশনের রিপোর্টটি দেখেছে এবং শিগগির এ বিষয়ে তাদের জবাব দেবে। যদিও মিয়ানমারের নেত্রী আং সান সুচির মতে বেশিরভাগ সুপারিশই বাস্তবায়নের পথে।
২০১২ সালে প্রথম বৌদ্ধদের সাথে সংহিসতায় সংখ্যালঘু বহু মুসলিম রোহিঙ্গা নিহত এবং ঘরছাড়া হয়। এরপর গতবছর অক্টোবরে নয়জন বর্ডার গার্ড পুলিশ নিহতের ঘটনায় রোহিঙ্গাদের ওপর দমন নিপীড়ন চালায় দেশটির সরকারি বাহিনী।
এদিকে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অতিদ্রুত তদন্ত দল পাঠানো বিষয়ে জাতিসংঘকে আহ্বান করেছে।
মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ হচ্ছে বলে এর আগে জাতিসংঘের যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, তার ভিত্তিকে আরো কঠোরভাবে এই পরামর্শ দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ওই খসড়া প্রস্তাবটি দেয়া হয়েছে। ২৩ মার্চ ওই প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটি হতে পারে।
সূত্র : বিবিসি।