সম্প্রতি ফ্রান্সে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:)-এর কার্টুন প্রদর্শনের কারণে দেশটির এক শিক্ষককে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করে এক কিশোর। হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই হামলাকারী কিশোর ১৮ বছর বয়সী আবদুল্লাহ আনজরভকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত ফ্রান্স।
ওই ঘটনার পর ইসলামিক বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেন, এই বিচ্ছিন্নতাবাদ ফ্রান্সের মুসলমান সম্প্রদায়গুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এরপরই ফ্রান্সজুড়ে ধরপাকড় শুরু হয়।
ধর্ম নিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্টের বক্তব্য এবং কর্মকাণ্ডে বেশ চটেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের সুরক্ষা নিশ্চিত এবং কট্টরপন্থি ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দেয়ায় ম্যাক্রোঁর ‘মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা’ করানো প্রয়োজন বলে কটাক্ষ করেছেন এরদোয়ান।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান নিজের একে পার্টির এক সভায় প্রশ্ন তোলেন- ‘ম্যাক্রোঁ’র ইসলাম এবং মুসলিমদের নিয়ে সমস্যাটা কোথায়?’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে কী বলা যেতে পারে? তার দেশের লাখ লাখ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে এমন আচরণ করতে পারেন? আমার মনে হয়, ম্যাক্রোঁর মানসিক চিকিৎসা না করালেই নয়।’
এরদোয়ানের এমন অপমানজনক মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ফরাসি প্রেসিডেন্ট। এ অবস্থায় প্যারিসে অবস্থানরত তুর্কি রাষ্ট্রদূত হার্ভ মাগরোকে তলব করেছেন ফরাসি সরকার। ম্যাক্রোঁ তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এরদোয়ানের এমন মন্তব্যের ব্যাখ্যা চাইবেন বলেও জানায় ফরাসি কর্তৃপক্ষ।
ফরাসি দফতর বিবৃতি জানায়, ‘প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। অতিরিক্ত মন্তব্য ও অভদ্রতা কোনো পন্থা নয়। এরদোয়ান যেন তার নীতিগত অবস্থান পরিবর্তন করেন, আমরা সেই দাবি জানাচ্ছি। তার এই অবস্থান সবদিক থেকেই বিপজ্জনক।’
চলতি মাসের শুরুতে ম্যাক্রোঁ ইসলামকে ‘সংকটাপন্ন ধর্ম’ বা ‘ইসলাম ধর্ম চরম ঝুঁকিতে’ রয়েছে মন্তব্য করে বেশ সমালোচিত হন। সে সঙ্গে ফ্রান্স থেকে ইসলামি উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান ফরাসি প্রেসিডেন্ট। ফ্রান্সের প্রায় ১০ শতাংশ নাগরিক মুসলিম, যা ইউরোপের অন্য যে কোনো দেশের মুসলিম জনসংখ্যার তুলনায় বেশি।
এদিকে ম্যাক্রোঁর মুসলিমবিদ্বেষী মন্তব্যের পর ফ্রান্সের সব ধরনের পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে তুরস্ক। আঙ্কারার এমন সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে প্যারিস। যদিও সম্প্রতি নিজেদের সম্পর্ক উন্নয়ন এবং যোগাযোগ অব্যাহত রাখার বিষয়ে একমত পোষণ করেন এরদোয়ান ও ম্যাক্রোঁ। কিন্তু সেই সম্পর্কে এখন বিষাদের সুর লেগেছে। ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত দুই সদস্য দেশ ফ্রান্স ও তুরস্কের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব ছাড়াও সিরিয়া, লিবিয়া, নাগোর্নো-কারাবাখ যুদ্ধসহ ভূমধ্যসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক বেশ জটিল হয়ে উঠছে।