বরিশাল নগরীর ঝাউতলা এলাকায় শতবর্ষী পুকুর ভরাট ও দখল বন্ধে রুল জারি করে স্থিতিবস্থার আদেশ দিয়েছেন আদালত। ২০১২ সালে দায়ের করা রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে আদালত এই আদেশ দেন। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রুলটি জারি করা হয়। পাশাপাশি পুকুরটি সংস্কার ও সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ কর্তৃক স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে প্রেরিত খবর বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুসারে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা গেছে, নগরীর ঝাউতলা এলাকায় শতবর্ষী পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণের পাঁয়তারা করছিলেন কতিপয় ব্যক্তি। যদিও জলাধার সংরক্ষণের আইনানুসারে যে কোন ধরনের জলাশয় ভরাটের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই প্রায় শতবছরের পুরোনো পুকুরটি ভরাটের উদ্যোগ নেয় প্রভাবশালী মহল। আর বিষয়টি জানার পরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান নগরবাসী।
এরই ধারাবাহিকতায় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ ২০১২ সালে ঝাউতলা পুকুর ভরাট ও দখল বন্ধে রিট পিটিশন দায়ের করে আদালতে।
দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এর আদালত চলতি বছরের ৫ মার্চ রায় প্রদান করে রুল এ্যাবসলিউড করেন। পাশাপাশি পুকুরটির সীমানা বেআইনীভাবে অতিক্রম ও মাটিদ্বারা ভরাট থেকে বিরত থাকা এবং পুকুরটি রীতিমত সংস্কার ও নিরাপদ পানি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
আদালত রায়ে বলেন, প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজন অনুধাবন করে জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এই আইনের ২ (চ) ধারায় প্রাকৃতিক জলাধার এর আওতায় মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার মাস্টার প্ল্যান চিহ্নিত নদী, খাল, বিল, দীঘি, ঝর্না বা জলাশয় অথবা সরকার, স্থানীয় সরকার বা কোন সংস্থা কর্তৃক, সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা বন্যা প্রবাহ এলাকা হিসেবে ঘোষিত প্রাকৃতিক জলাধার এর আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া সরল পানি এবং বৃষ্টির পানি ধারণ করে এমন ভূমিও প্রাকৃতিক জলাধারের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
একইসাথে মহানগরী ও বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকায় অবস্থিত ব্যক্তি মালিকানাধীন হিসেবে রেকর্ডীয় পুকুরগুলিকে এই রায় প্রাপ্তির পরবর্তী ১ বছরের মধ্যে প্রাকৃতিক জলাধারের সংজ্ঞাভুক্ত হিসেবে গেজেটভুক্তের পর তা প্রকাশের জন্য বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
প্রসংগত, বাদী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ এবং বিবাদি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোঃ মনিরুজ্জামান। এছাড়া সরকার পক্ষে ছিলেন ডিএজি অমিত তালুকদার।
এছাড়া আইনের ব্যাখ্যা স্পষ্টকরণের জন্য রিট মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং সিনিয়র অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগীকে শোনেন আদালত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলন সংগ্রাম কমিটির বরিশালের আহ্বায়ক এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ঝাউতলা পুকুরটি দখলমুক্তে তাদের আন্দোলন দীর্ঘদিনের। দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে প্রাপ্ত আদেশটি তাদের সেই আন্দোলনেরই ফসল। এই আদেশের ফলে কেবল বরিশাল নগরবাসীরই নয়, বিজয় হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জলাধার সংরক্ষণ আইনের যেটুকুও বা কমতি ছিল, আদালতের সুচিন্তিত এবং সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণের কারণে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। জলাশয় সংরক্ষণ এবং রক্ষায় তাদের চলমান আন্দোলন এই রায়ের পর আরও বেগবান এবং ভবিষ্যতের পাথেয় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বরিশালের সামাজিক আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু।