বড় আশা ছিল ছেলে দুইটা লেখাপড়া শেষ করে বড় চাকরি করবে এবং সংসারের হাল ধরবে। পরিবারের অভাব দূর হবে। নিজেও স্বস্তি পাবেন। তবে দীর্ঘদিন যাবত বুকে লালন করা এই আশা আর স্বপ্ন নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে চিন্তাও করেননি নুরুদ্দিন। এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না, তিনি বাস্তবে আছেন নাকি কোনো ঘোরের মধ্যে আছেন।
শনিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের বারান্দায় বসে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দুই ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে এভাবেই স্বপ্ন ভেঙে যায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের কর্মচারী নুরুদ্দিনের। কান্নায় বুক ফেটে যায় তার। কারো সান্ত্বনাই তার মনকে শান্ত করতে পারছে না। ক্রমাগত কেঁদেই চলেছেন তিনি। কথা বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন।
নুরুদ্দিনের কান্না আর শোকে কাতর প্রেসক্লাবের সব কর্মকর্তা ও সদস্যসহ জেলার সাংবাদিকরাও। সর্বস্তরের গণমাধ্যম কর্মীদের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে নুরুদ্দিনের দুই পুত্র হারানোর এ ব্যথা।
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের কর্মচারী নুরুদ্দিন প্রায় ত্রিশ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে চাকরি করে আসছেন। বড় ছেলে সাব্বির নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে অনার্স এবং ছোট ছেলে জুবায়ের একই কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। দুই ছেলে ছাড়াও এক মেয়ে রয়েছে।
ছেলে মেয়েদের মানুষ করতে দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে প্রেসক্লাবের অর্ধবেলা চাকরির পাশাপাশি কখনো ফুটপাথে দোকানদারি করেছে, কখনো রিকশা চালিয়েছেন, কখনো কুলির কাজও করেছেন নুরুদ্দিন। ছেলেরা লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে। সংসারের হাল ধরলে পরিশ্রম থেকে কিছুটা রেহাই পাবেন এমন আশায় ছিলেন নুরুদ্দিন।
এক সাথে প্রায় উপযুক্ত বয়সের দুইটি পুত্র হারানো শোকাতুর বাবা নুরুদ্দিন কাঁদতে কাঁদতে সময় নিউজকে বলেন, ‘ছেলেরা আমারে চিরতরে রেহাই দিয়া চইলা গেলো। আমার আর কোনো আশা ভরসা নাই। এখন আমি কি নিয়া বাঁচমু? আমারতো আর কোনো কিছুই রইলো না।”
এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম সময় নিউজকে বলেন, এর চেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা আর হতে পারে না। এক সাথে দুই সন্তানের লাশের ভার বহন করা একজন বাবার পক্ষে সম্ভব না।
তিনি বলেন, নুরুদ্দিন অনেক আশা নিয়ে হাঁড়ভাঙা পরিশ্রম করে এই দুই ছেলেকে এই পর্যন্ত লেখাপড়া করিয়ে আসছে। সকালে রিকশা চালিয়েছে। বিকেলে প্রেসক্লাবের ডিউটি করেছে। ডিউটি শেষ করে রাতে পান সিগারেটের দোকানদারিও করেছে। তার এই কষ্ট আমরা এত বছর যাবত দেখে আসছি।
এত কষ্ট কেন করো জানতে চাইলে নুরুদ্দিন প্রায় সময়ই আমাদের বলতো, স্যার আর কয়েক বছর পরে ছেলে দুইটা লেখাপড়া শেষ কইরা ফেললে আমার আর এত কষ্ট করতে হইবো না।
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম আরও বলেন, এ ঘটনায় শুধু প্রেসক্লাব নয়, নারায়ণগঞ্জের পুরো সাংবাদিক সমাজ মর্মাহত। আমরা নুরুদ্দিনের পাশে আছি। তার ভবিষ্যৎ জীবন কিভাবে চলবে সেই বিষয়টি আমরা দেখব, যাতে কারো কাছে গিয়ে হাত পাততে না হয়।