বরিশালের রুপাতলীতে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের কর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করার সময় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে এ ঘটনায় ড্রিম লাইফ নামক ওই মাদক নিরাময় কেন্দ্রের ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
মৃত যুবকের স্বজনদের দাবি তাকে হত্যা করা হয়েছে।
বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) নগরের রুপাতলীস্থ রেডিও স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত যুবকের নাম সুমন খান (৩০) এবং ওই এলাকার খান বাড়ির মৃত আব্দুস ছাত্তার খানের ছেলে।
সুমনের মা খাদিজা বেগম জানান, সুমনের কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলো। বিভিন্ন অযুহাতে সে আমাকেসহ বাসার স্বজনদেরও মারধর করতো।
এ কারণে তাকে এর আগেও ওই কেন্দ্রে রাখা হয়। এরপর দেড়মাস ধরে সে বাসায় ছিলো। গতরাতেও বিভিন্ন অযুহাতে সুমন আমাকে মারধর করে। বিষয়টি সুমনের অপর দুই ভাই সুলতান ও রুম্মানকে জানানো হলে তারা আবারো ওই কেন্দ্রকে জানায়। সেখান থেকে বুধবার বিকেলে ৬/৭ জন লোক আসে সুমনকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
মা খাদিজা বেগমের দাবি, পরিবারের অবগত না করেই সুমনকে ধরে নিয়ে যেতে উদ্যত হয় মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সদস্যরা। একপর্যায়ে ধস্তাধস্তিতে ঘরের টিনের বেড়া ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে ওই যুবকরা।
এরপর সুমনকে ঘর থেকে বের করে মাটিতে উপুর করে ফেলে দেয়। এরপর তার পিঠের উপর ৩/৪ জন যুবক উঠে চেপে ধরে এবং স্বজনদের কাছে গামছা ও রশি চায় সুমনকে বাঁধার জন্য। পরে সুমন নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
একপর্যায়ে তড়িঘড়ি করে সুমনকে একটি অটোরিকশায় উঠালে তার মৃত্যু নিশ্চিত হয় এবং বিষয়টি স্থানীয়রা টের পেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় মাদক নিরাময় কেন্দ্রের চারজনকে আটক করে। একই সময় ওই কেন্দ্রের মালিক বাপ্পী ঘটনাস্থলে এলে তাকেও ধাওয়া করে আটক করা হয়।
এ ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন নিহতের বোনেরা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের স্বজন বকুল বেগম জানান, সুমনকে উলঙ্গ করে মারধর করা হয়। পাশাপাশি বাড়ির সামনের উঠানে যখন তাকে উপুর করে ফেলা হয় তখন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো সুমনের।
আমরা তার পেছনে থাকা ৩/৪ জনকে নেমেও যেতে বলি কিন্তু তারা শোনননি। এরপরই সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে, মুখে পানি দেওয়া হলেও কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি।
নিহতের চাচাতো ভাই জুয়েল জানান, নিরাময় কেন্দ্রে নিতে তারা সুমনের সঙ্গে কৌশলী আচরণ না করেনি। পশু যেভাবে কোরবানি দেওয়া হয়, সুমনের সঙ্গে সেভাবে আচরণ করা হয়।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) এ আর মুকুল জানান, এ ঘটনায় নিহতের পরিবার মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছে রিহ্যাব সেন্টারের কর্মীদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি স্থানীয়দের কাছ থেকেও বিষয়টি সম্পর্কে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি জানান, এ ঘটনায় রিহ্যাব সেন্টারের পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।