বরিশালকে চলতি বর্ষায় ইতিহাস সৃষ্টি করা জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত করেছে পুরো নগরী। ১৭ আগস্ট থেকে ৬দিনব্যপি বাড়তে থাকা কীর্তনখোলার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে বহু আগেই।
গত ৬ দিন যাবত প্রতিদিন দুই বেলা জোয়ারের পানিতে ভাসছে বরিশালের নিম্নাঞ্চল। ভুক্তভোগীরা অভূতপূর্ব এই ঘটনার দায় চাপিয়েছেন বিসিসি’র কাঁধে। বিসিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলীর গাফিলতিতে নগরবাসী এমন অবস্থার কবলে পড়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে সৃষ্ট অসন্তোষের প্রভাবে শোকজ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে।
এদিকে আজ রোববার বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বিসিসি কর্তৃক প্রকৌশলী আনিচুজ্জামানকে শোকজ করার সংবাদ দেখে নগরীর বাসীর মাঝে এক প্রকার হাস্যকর রহস্যের সৃষ্টি করেছে।
এসময় তারা ক্ষোভ প্রকাশ মন্তব্য করে বলেন একজন প্রকৌশলী এত বিশাল অংকের বরাদ্ধের ফাইল মন্ত্রালয়ে পাঠাবার ক্ষমতা কতটুকু রাখেন তাহলে ওখানেতো সচিব, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার হাত হয়ে পরিশেষে মেয়রের স্বাক্ষর গ্রহন শেষে মন্ত্রালয়ে দাবী কৃর্ত বরাদ্ধের ফাইল পাঠানো হয়ে থাকে।
তাহলে একজন সাধারন কর্মচারীকে শোকজ করে বিসিসি কর্তৃপক্ষ নগরবাসীকে কি বোঝাতে চাইছেন। বিসিসিতে সাধারন কর্মচারীরাই কি নিজের ইচ্ছামত কাজ করে। ওখানে কি উধ্বর্তন কর্মকর্তা নেই তাহলেই কি আনিচ সব।
জানা গেছে, গত বছরের ৩১ জুলাই প্রকাশ্য উন্মুক্ত রাজপথে প্রথমবারের তরুন মেয়র ঘোষণা করেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নের আলো দেখিয়ে স্মরণকালের বিশালাকৃতির বাজেট ঘোষনা করেছিলেন। তবে বরাদ্দ না পাওয়ায় শুরু করা যায়নি বাজেটের আওতাধীন প্রকল্পের কোন উন্নয়নমূলক কাজ।
এরই মধ্যে বাতিল হয়ে গেছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প। নানা অসংগতির কারণে মন্ত্রালয় থেকে বাতিল হয়ে যায় সেই বরাদ্দ। যদিও সংশোধন করে ৬৯০ কোটি টাকার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল বিসিসি।
তবে নগর উন্নয়নের সেই প্রকল্প বাতিল হওয়ায় জনদুর্ভোগে পড়েন বরিশাল মহানগরবাসী- এমনটাই মনে করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিসিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আনিচুজ্জামানকে শোকজ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি ইস্যু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বস্ত সূত্র। আর ওই চিঠিতে চলতি বর্ষা মৌসুমে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার বিষয়টিকেই মূলত প্রাধান্য দেয়া হয়েছে শোকজের ক্ষেত্রে।
সূত্র মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিসিসি’র প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ৫৪৮ কোটি ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৪৩৭ টাকার। তবে গত ৩০ জুন প্রস্তাবিত বাজেটের মেয়াদ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কোন কার্যক্রমই হাত দিতে পারেননি বিসিসি’র তরুন মেয়র।
এরই মধ্যে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে বিসিসির ব্যয় দেখানো ৪১৬ কোটি ২২ লাখ ৪৮ হাজার ১৪৪ টাকা। এরমধ্যে ড্রেন নির্মাণ এবং নগরীর খালগুলো উদ্ধার এবং পুন:খননের বিষয়টিও বাজেটে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে এর একটিরও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ফলে পূর্বের অবস্থাতেই রয়ে গেছে নগরীরর ড্রেন ও খালগুলো হয়নি কোন সংস্কার বা উন্নয়ন।
এদিকে অতিমাত্রা বৃষ্টি এবং কীর্তনখোলার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জলবদ্ধতা হয়ে পড়ছে পুরো বরিশাল মহানগরী। আর এর অন্যতম কারণ হিসেবে খালগুলো প্রায় দীর্ঘদিন যাবত মৃত অবস্থা থাকাকে দায়ী করেছেন নগরের ভূক্তভোগী বোবা সাধারন মানুষ।
তাই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিসিসি’র পৃথক ৩ টি মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৫০ কোটি টাকা। তবে এর একটিতেও বরাদ্দ অনুমোদন দেয়নি এডিবি বিসিসি সূত্র জানায়, গত বছরের একনেকের সভায় দাবীকৃর্ত বরাদ্ধে নানা অসংগতি থাকার কারণে চাওয়া প্রস্তাবিত বরাদ্ধ বাতিল হয়ে যায়।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প। নগর উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক পরিমানের আওতায় ছিল এসব প্রকল্প যা বাতিলের পিছনে বিসিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আনিচুজ্জামানকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্বাহী প্রকৌশলীর ইচ্ছাকৃত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে শোকজে। বৃহৎ এ প্রকল্পের প্রকল্প কর্তকর্তা ছিলেন প্রকৌশলী আনিচুজ্জামান।
এবিষয়ে জানতে নির্বাহী প্রকৌশলী আনিচুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এছাড়া বিবিসি’র সচিব ইবাদত হোসেন বিষয়টি স্বীকার করলেও কোন ধরনের মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।