রিপোর্ট ঃনিউজ ডেস্ক
স্থান টিএসসির চায়ের দোকান। সময় বিকেল ৪ টা বেজে ৩০ মিনিট। বিখ্যাত চায়ের কারিগর স্বপন ভাই তার ৩২ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হাতে চা বানাচ্ছেন। তার চা হাতে নিয়ে ৫ জন লোক এই মুহূর্তে টিএসসিতে দাঁড়িয়ে আছেন। স্বপন ভাই চা বানাতে থাকুন, আমরা এর ফাঁকে সেই ৫ জনের পরিচয় জেনে আসি।
১ম জন ঢাবির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। অনার্স ফাইনাল দিয়ে তিনি রেজাল্টের আশায় আছেন। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। শীতের আমেজে শরীরে হালকা চাদর টেনে দিয়েছেন। হাতে চায়ের কাপ আর ভাবছেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের নানা কথা। চাকরিতে ঢুকলেও প্রতি সপ্তাহে একবার হলেও টিএসসিতে আসবেন এ সংকল্প করে ফেলেছেন ইতোমধ্যে। আগে ক্যাম্পাসকে ভালবাসতেন, ইদানিং বড্ড মিস করা শুরু করেছেন!
২য় জনের বয়স ১৯ বছর। মোটামুটি ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টারের। চোখে কালো গ্লাস আর গায়ে ঢাবির লোগো ওয়ালা কালো টিশার্ট পড়ে তিনি নিজের মধ্যে টিএসসির চা-খোর ভাব নেয়ার হালকা চেষ্টায় আছেন । প্রথম বর্ষের এ ছাত্রের সামনে টার্ম পরীক্ষা হলেও তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে চা-টা কেন এত দ্রুত ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। তিনি ভাবছেন – “নাহ! এতদিন একেবারেই নিয়মিত চা খাওয়া হয়নি, এখন থেকে দৈনিক এখানে আসতে হবে।”
তালিকার ৩ নম্বরে আছেন একজন মেয়ে। শ্যামলা এ মেয়েটার কপালে কালো টিপ। চায়ের স্বাদটা তার ভাল লাগছে। হঠাৎ তার মনে হতে লাগল এ মুহূর্তে বৃষ্টি নামলে খুব হত। শীতের মধ্যে কাঁপতে কাঁপতে গরম চা-টা শেষ করতে পারলে আজকের বিকেলটা স্মরণীয় হয়ে থাকত। একথা ভাবার পরেই হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে তার এমন মনে হচ্ছে বলে মনে হতে লাগল।
যিনি চার নম্বরে আছেন তার বয়স ১৫। দেখতে সুন্দর আর রুচিতে শৌখিন এই ছেলে স্কুল থেকে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে এসেছে। সে তার এক পরিচিত বড়ভাই বলেছে,”চা তো দার্জিলিং গেলেও পাবি, কিন্তু টিএসসির চা তো আর ওইখানে পাবিনা” । চা প্রেমিক এ ছেলে একথা শোনার পরেই চা খেতে চলে এসেছে। সে মনেমনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, যাইহোক না কেন সে এখানেই পড়বে; এই ক্যাম্পাস না পেলে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কোন দরকার নেই।
তালিকার শেষের জন সাবেক ঢাবিয়ান। অফিস শেষে অভ্যাসবশত আড্ডা দিতে চলে এসেছেন টিএসসিতে। বন্ধুরা আসতে দেরি করায় ফরমাল পোশাকধারী এই ভাই চা নিয়েছেন। চা নিয়েই উনি দেখলেন শ্যামলামতন টিপ পরা একটা ছিমছাম মেয়ে আদুরে ভঙ্গীতে চা খাচ্ছে। মেয়েটা এক চুমুক দেয় আর এদিক ওদিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবে। তিনি ভেবে পেলেননা কারো চা খাবার ভঙ্গী এত সুন্দর হয় কি করে? পরক্ষণেই তার মনেহল মেয়েটাকে তার ভাল লেগেছে। গিয়ে কথা বললে মেয়েটা কি কিছু মনে করবে? উনি ২৭ বছরের একাকী জীবনের শেষ সাহসটুকু নিয়ে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলেন। শ্যামলামতন মেয়েটা দেখল কাঁধে ব্রাউন ব্যাগ নিয়ে টাই পড়া একজন সুন্দর যুবক তার দিকে আসছেন…
স্বপন ভাইয়ের চা বানানো এগিয়ে চলে, এগিয়ে চলে টিএসসিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অনেক স্মৃতি, অনেক মানুষের গল্প। নতুন গল্প আসে, পুরাতন গল্পেরা ভীড় করে সময়ের ক্যানভাসে, টিএসসি দাঁড়িয়ে রয় আপন মহিমায়!
লিখেছেন- নূর হোসেন নয়ন
[পরিমার্জিত]