জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া ট্রেনের টিকিট কাটা যাবে না, দুর্নীতিমুক্তভাবে রেলে ১৫ হাজার জনবল নিয়োগ এবং ৩ মাসের মধ্যে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১০ কর্মকর্তার একটি উইং চেয়েছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন। তবে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার তার যে স্বপ্ন সেটি আপাতত স্বপ্নেই সীমাবদ্ধ থাকছে।
বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। এ দিন বিকেলেই নিজের ওএসডির সংবাদটি নিজেই দেন। লিখেছেন, ‘ওএসডি হলাম’।
তবে অতিরিক্ত এ সচিবের ওএসডির খবরে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। এ ওএসডির বিরোধিতা করছেন অনেকেই। অনেকেই এই ওএসডির মূল কারণ হিসেবে সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা ‘দুর্নীতিবাজদের চাল’কে দায়ী করছেন।
আজিজুল পারভেজ নামের এক সাংবাদিক তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সৎ সাহসী কর্মকর্তা মাহবুব কবির মিলন ওএসডি, মুনীর চৌধুরী এখন বিজ্ঞান জাদুঘরে, দুর্নীতি দমন তাইলে ভালোই চলছে?’
সাংবাদিক জামিউল আহসান শিপু লিখেছেন, ‘রেলের কালো বিড়াল ধরতে গিয়ে ওএসডি হলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে গিয়ে এই অতিরিক্ত সচিব রেলের কালো বিড়ালদের চক্ষুশূলে পরিণত হন। মাত্র ৪ মাসের কর্ম দিবসে এই অতিরিক্ত সচিব রেলকে একটি লাভজনক ও জনবান্ধব বাহনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। স্বল্প সময়ে রেলকে গতিশীল করতে এত উন্নয়নমূলক, সংষ্কার করার পরও সরকার এই ব্যক্তিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিল। এ বিষয়ে বলার কিছুই নেই।’
কাওসার বিন হোসেন নামে একজন লিখেছেন, ‘৩ মাসের মধ্যে রেলখাতকে দুর্নীতিমুক্ত করার ঘোষণক দেন অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন, এর প্রতিদান হিসেবে তাকে আজকে ওএসডি করা হলো! বাংলাদেশে সৎ অফিসার হয়ে চাকরি করা বড় কষ্টকর।
(বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইংরেজিতে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি এবং যা সংক্ষেপে ওএসডি, অর্থাৎ আপনার চাকরি থাকবে কিন্তু হাতে কোনো পাওয়ার থাকবে না)।’
এদিকে অতিরিক্ত এ সচিবকে ফেরাতে সরব হয়ে উঠেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সমর্থকরা। ফেসবুক গ্রুপ ‘পাবলিক সার্ভিস হেল্প গ্রুপ’ ও ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে ফ্যানস ফোরামে’ অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন এই অতিরিক্ত সচিব। তার প্রতিটি পদক্ষেপের আপডেট থাকত এই গ্রুপগুলোতে।
তাকে ওএসডির সিদ্ধান্তে ইতোমধ্যে ফেসবুকে ‘মিলন স্যারকে দ্রুত স্বপদে দেখতে চাই’ নামে একটি ইভেন্ট তৈরি করা হয়েছে। এতে অতিরিক্ত সচিববের ওএসডির আদেশ বাতিল করতে ১৩ আগস্টের আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে।
রেলের যা করেছিলেন এবং করতে চেয়েছিলেন মিলন-
২৫ মার্চ রেলওয়েতে দায়িত্ব পাওয়ার পরই আমূল পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছিলেন মাহবুব কবীর মিলন। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
>> যাত্রীদের দুর্ভোগ নিরসন ও কালোবাজারি বন্ধে ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ নিয়ম চালু। এনআইডি দিয়ে ট্রেনের টিকিট কেনা বাধ্যতামূলক করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত।
>> রেলের ই-সেবা অ্যাপে অভিযোগের ট্যাব সংযুক্ত করা।
>> আগে অনলাইনে টিকিট পেমেন্ট রিকোয়েস্ট ফেইলড (ব্যর্থ) হলে তা ৩০ মিনিট পেন্ডিং থাকত। সেটাকে বর্তমানে ১৫ মিনিটে কমিয়ে আনেন তিনি।
>> করোনাকালীন সময়ে আম চাষিদের সুবিধার কথা চিন্তা করে রাজশাহী থেকে সরাসরি মালবাহী ট্রেনে আম পরিবহন ও কোরবানিতে ট্রেনে করে মাত্র ৫০০ টাকায় গরু ঢাকায় অানার কাজটি তিনিই শুরু করেন তিনি।
>> রেলওয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ব্যাংকিং সিস্টেম চালু করেন তিনি।
>> রেলওয়ের টিকিটে শতভাগ অনলাইন সিস্টেম চালু। রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকিটের পাস প্রথার বিলুপ্তি।
>> এ বছরেই রেলে ১৫ হাজার জনবল স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগের প্রতিশ্রুতি।