শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বরখাস্ত হলেন পাক গান হে। ব্যাপক দুর্নীতি কেলেঙ্কারির অভিযোগে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে শুক্রবার (১০ মার্চ) দেশটির শীর্ষ আদালত তাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বরখাস্ত করেছে।
সাংবিধানিক আদালতের প্রধান বিচারপতি লি জাং মি বলেছেন, ‘পার্কের কার্যক্রমে দেশটির গণতান্ত্রিক চেতনা এবং আইনের শাসন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’
দুর্নীতির অভিযোগে পার্লামেন্টে অভিশংসিত হবার পর তাই আদালতের রায়ে ক্ষমতাচ্যুত হলেন পাক গান হে।
তবে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতির হাঁড়ির খবর যারা রাখেন, তারা দাবি করছেন, পাক গান হে’র এই পতনের সূচনা হয়েছিল মূলত একটি কুকুরছানা নিয়ে সৃষ্ট ঝগড়া থেকে।
ঝগড়াটি বেধেছিল প্রেসিডেন্ট পাক গান হে’র বান্ধবী চোই সুন-সিল এবং তার কথিত প্রেমিক দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক ফেন্সিং-তারকা কো ইয়ং তাই’র মধ্যে ।
সুদর্শন এবং সুঠাম দেহের অধিকারী ৪০ বছর বয়স্ক মি. কো’র সাথে ৬০ বছর বয়সী মিস চোই’র সম্পর্ক ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। যদিও তারা (মি. কো এবং মিস চোই) বরাবরই দাবি করেছেন যে তারা ছিলেন নিছক ভালো বন্ধু, সেখানে প্রেমের কোনো সম্পর্ক ছিল না।তবে কুকুরছা্না নিয়ে সেই ঝগড়ার কারণ পরবর্তীতে মি. কো নিজেই সাংবাদিকদের কাছে বর্ণনা করেছেন।
তার বর্ণনা মতে, মিস চোই’র মেয়ের একটি পোষা কুকুরছানা ছিল এবং একদিন তিনি সেই কুকুরটি দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন মি. কো’কে।
এরপর মি. কো কুকুরটি বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং সেটাকে বাড়িতে রেখে তিনি আবার বেরিয়ে যান গলফ খেলতে। কিন্তু খেলা শেষে বাড়ি ফিরে তিনি দেখেন যে মিস চোই সেখানে বসে রয়েছেন। কুকুরটিকে এভাবে বাড়িতে একা ফেলে রেখে যাওয়ার জন্য মি. কো’র ওপর ভীষণ ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠেন মিস চো। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া বাধে। মিস চোইয়ের আচরণ ও গালাগালিতে মি. কো এতটাই ক্ষেপে যান যে তিনি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেন- দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে মিস চোই’র সম্পর্কের কথা তিনি ফাঁস করে দেবেন।
এরপর তিনি প্রেসিডেন্ট পাক গান হে প্রশাসনে মিস চোই’র প্রভাব খাটানোর প্রমাণ সংগ্রহ করেন। তিনি এমন সব সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করেন, যেখানে মিস চোই প্রেসিডেন্টের সহকারীদের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত চাকরবাকরের মতো ব্যবহার করছেন। পরবর্তীতে মি. কো সেসব প্রমাণ একটি স্থানীয় মিডিয়ার কাছে দিয়ে দেন।
এশিয়ান গেমসে ফেন্সিংয়ে স্বর্ণপদক জেতার পর মি. কো অবসর নিয়েছিলেন। এরপর তিনি ‘ভিলোমিলো’ নামে মেয়েদের পোশাক ও হ্যান্ডব্যাগ তৈরির একটি কোম্পানি চালু করেন। ওই সময়টাতেই চোই সুন-সিল’র সঙ্গে মি. কো’র পরিচয় হয়। এরই সূত্র ধরে মিস. চোই’কে পোশাক সরবরাহ শুরু করেন মি. কো।তবে সেগুলোর মূল গ্রাহক ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পাক গান হে। তাকে মি. চো উটপাখী ও কুমিরের চামড়ার তৈরি হাজার হাজার ডলার দামের হ্যান্ডব্যাগ এবং অন্যন্য বিলাসবহুল পোশাক সরবরাহ করেন।
মি. কো দাবি করেছেন, ‘এসব পোশাকের দাম পরিশোধ করতেন মিজ চোই।’
প্রেসিডেন্ট পাকের হাতে ‘ভিলোমিলোর’ হ্যান্ডব্যাগ শোভা পাওয়ার পর মি. কো’র সুনামও বাড়তে থাকে। পাশাপাশি, মিস চোই’র সাথে তার ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে।
গত বছর অক্টোবর মাসে মি. কো নিই টিভিতে একটি সাক্ষাতকার দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘মিস চোই’র সবচেয়ে প্রিয় ছিল মিস পাকের প্রেসিডেন্সিয়াল ভাষণগুলো সম্পাদনা করা।’ এরপর সাংবাদিকরা একটি একটি ট্যাব খুঁজে বের করেন।সেখানে মিস চোই’র একটি সেলফি পাশে ছিল প্রেসিডেন্টর ভাষণের কাগজপত্র।
এরপর মিস চোই’র বিভিন্ন সন্দেহজনক ব্যবসায়িক তৎপরতা নিয়ে অভিযোগ গাঢ় হতে শুরু করে। জনমনে তৈরি হয় ব্যাপক ক্ষোভ।
এর সূত্র ধরে শুরু হয় ব্যাপক তদন্ত। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পাক স্বীকার করতে বাধ্য হন বান্ধবীকে (মিস চোই) সরকারের কাজকর্মে নাক গলানোর অন্যায় সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি। যদিও দুর্নীতির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। তাতে অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি পাক গান হে’র। শেষ পর্যন্ত এই সব অভিযোগই তার অভিশংসন এবং ক্ষমতাচ্যূতি ডেকে আনলো।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।