বহু প্রতীক্ষার পর অবেশেষে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ার বাজারে বাংলাদেশিকর্মী যাওয়া শুরু হচ্ছে শুক্রবার (১০ মার্চ)। অনলাইন পদ্ধতিতে কর্মীদের যাচাই-বাছাইসহ সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ৯৮ জন কর্মী নিয়ে এদিন সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশে উড়াল দিচ্ছে বাংলাদেশ বিমানের (বিজি ৮৬) একটি ফ্লাইট।
তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা না থাকলেও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রথম ফ্লাইট শুরুর প্রাক্কালে শুক্রবার সকালে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এছাড়া সেখানে উপস্থিত থাকবেন বায়রা সভাপতি বেনজির আহমেদ ও মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপনসহ জনশক্তি কর্মসংস্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত তিন দফায় আরও চার শতাধিক কর্মী মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা রয়েছে। সেবা খাত ও শিল্প-কারখানার জন্য এসব কর্মী পাঠানো হচ্ছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও বায়রা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় গমনেচ্ছু কর্মীদের পাসপোর্ট-ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ের জন্য মালয়েশিয়ান হাইকমিশনে পাঠানোর পর তাদের ভিসার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। একভাবে বিএমইটির স্মার্ট কার্ডও কর্মীরা হাতে পেয়েছেন।
জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন বৃহস্পতিবার রাতে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টফোর ডটকমকে মালয়েশিয়ায় শুক্রবার প্রথম ফ্লাইট যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সেবাখাতের ৯৮ জন কর্মী প্রথম পর্যায়ে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে। এরপর পর্যায়ক্রমে বাকিরা যাবে। প্রথম ফ্লাইটে বিএমইটির ২ জন কর্মকর্তাসহ রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধি মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন। সার্ভিস সেক্টরের আওতায় কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে ‘কার্গো লোডার’ পদে প্রথম ব্যাচের কর্মীরা নিয়োগ পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
বায়রার সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হচ্ছে। এখানে প্রতারণার শিকার হওয়ার আশঙ্কা নেই।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়া থেকে নিয়োগকর্তাদের একটি দল ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এসে বাছাই করা ৪০০ কর্মীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তারা কাজে দক্ষতার ওপর জোর দিচ্ছে। পাশাপাশি চলছে বায়ো-মেডিক্যাল পর্ব। সব কিছুই আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) অনুসৃত বিধান অনুযায়ী করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু হলে কেউ আর অবৈধ পন্থায় সে দেশে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। কারণ জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে একজন কর্মী তিন বছরের ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। পরবর্তী সময়ে আরও দুই বছর ভিসা নবায়ন করতে পারবেন। শুধু তা-ই নয়, নিয়োগকর্তা চাইলে কর্মীরা আরো পাঁচ বছর সেখানে অবস্থান করতে পারবেন। ভিসা নবায়ন ফি নিয়োগকর্তাই বহন করবেন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মালয়েশিয়া সরকারের চাহিদাপত্রে বলা হয়েছে, যারা যাচ্ছেন তাদের দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মঘণ্টা হবে। চাইলে ওভারটাইমও করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকারের শ্রম আইন প্রযোজ্য হবে। চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকা মাসিক বেতনই কর্মীদের দেওয়া হবে। বেতন পরিশোধ করা হবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। কোনো কোম্পানি বেতন-ভাতা কম দিতে চাইলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই তথ্য চলে যাবে দুই দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে। সুতরাং বেতন-ভাতা নিয়ে কোনো নিয়োগকর্তাই জালিয়াতি করতে পারবেন না।
বায়রার সভাপতি বেনজির আহমেদ বলেছেন, আগে কর্মীদের কোনো বীমা সুবিধা ছিল না। এখন যারা যাচ্ছে তাদের প্রতিজনের দুই লাখ টাকার বীমা সুবিধা থাকছে। আর অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে বায়োমেডিক্যাল করা হচ্ছে। প্রতারিত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
এদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠাতে জনশক্তি ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ থেকে সিন্ডিকেটের অভিযোগ তোলা হলেও বরাবরই বায়রার বর্তমান কমিটির সভাপতি ও মহাসচিবসহ সংশ্লিষ্টরা এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসিও বলেছেন, কোনোভাবেই এক্ষেত্রে সিন্ডিকেট হতে দেওয়া হবে না। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কর্মী যাবে মালয়েশিয়ায়। যাদের ট্র্যাক রেকর্ড ভাল সেসব রিক্রুটিং এজেন্সিই কর্মী পাঠাবে মালয়েশিয়ায়। এজন্য দুই দফায় ৯৫৬টি রিক্রুটিং এজেন্সির নামও পাঠানো হয়েছে দেশটিতে। সেখান থেকে তারা রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচন করে কর্মীর চাহিদা দেবে।
উল্লেখ্য যে, বিদায়ী ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে কর্মী পাঠানোর সুযোগ রেখে মালয়েশিয়ার সঙ্গে ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। চুক্তির পরদিনই মালয়েশিয়া সরকার বিদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধ ঘোষণা করে। কয়েক মাস আগে সেই ঘোষণা প্রত্যাহার করে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। এর পরই জিটুজি প্লাস চুক্তির আলোকে কর্মী নিয়োগের বিষয়টি সামনে চলে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় অবশেষে শুক্রবার কর্মী পাঠানো শুরু হচ্ছে দেশটিতে।