ঐতিহাসিক ৭ মার্চ মঙ্গলবার। বাঙালি জাতির এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এইদিনে ফাগুনের অগ্নিঝরা বিকেলে বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।’ এমন আহ্বানে সারা দিয়ে বাঙালি জাতির জেগে ওঠা, পরাধীনতা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের আবির্ভাবের পথচলার সূচনা। তাই আজও ৪৬ বছর আগে বঙ্গবন্ধুর যুগান্তকারী ভাষণের স্মারক হিসেবে দিনটি অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।
১৯৭১ সালের এইদিনে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল জনসমাবেশে দেওয়া ওই ভাষণে বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে আরও উচ্চারিত হয়েছিল, ‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো…’। একটি ভাষণ স্বাধীনতাযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার সাড়ে সাত কোটি নিরস্ত্র বাঙালিকে করেছিল ঐক্যবদ্ধ, পরিণত করেছিল স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বেলিত প্রতিবাদী জাতিতে।
দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ অফিস থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, ‘১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি অবিস্মরণীয় দিন। এইদিনে তৎকালীন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এক উত্তাল জনসমুদ্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধু তার বজ্রনিঘোষ কণ্ঠে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।’ এই ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলনরত নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত করে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামকে জনযুদ্ধে পরিণত করেন। ১৯৭০ সালের আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী বিজয়ী আওয়ামী লীগ তথা বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করে।’
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করার আহ্বানের অধীর অপেক্ষায় ছিল বাঙালি জাতি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা। বঙ্গবন্ধুর সেই আহ্বান দ্রুতই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
সেদিন বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত হন। লাখো জনতার উপস্থিতিতে ময়দান ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। স্লোগান ছিল ময়দানজুড়ে ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’। উপস্থিত জনতাকে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। মাত্র ১৯ মিনিটের ভাষণে তিনি ইতিহাসের পুরো ক্যানভাসই তুলে ধরেন।
স্বাধীনতা অর্জনের ডাক শোনার জন্য প্রতিটি মানুষ ও মিছিলের একমাত্র গন্তব্য হয়ে উঠেছিল সে-দিন রেসকোর্স ময়দান। তাদের স্লোগানে মুখরিত জনসমুদ্র পরিণত হয়েছিল বাঙালির মিলন মোহনায়। লাঠি হাতে নগর-গ্রামের প্রতিবাদী মানুষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিব, বৃদ্ধ-যুবক সর্বস্তরের মানুষের সেদিন ছিল তখন একটাই সংকল্প— বাঙালির মুক্তি।
এরপর ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই। ৩০ লাখ শহীদের আত্মাহুতি ও তিন লাখের অধিক মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে বীর বাঙালিরা। এভাবেই অনেক বেশি মূল্যে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে অদম্য সাহসী বাঙালিরা।
আওয়ামী লীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের স্মৃতি-বিজড়িত ৭ মার্চ উপলক্ষে দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
৭ মার্চ (মঙ্গলবার) ভোর সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। সকাল ৮টায় দেশের সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, থানা, উপজেলা, মহানগর ও জেলাসমূহের প্রতি পাড়া, মহল্লায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রচারের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে সভা-সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।