শুক্রবার ফালগুনের প্রথম দিন। একই সঙ্গে ভালোবাসা দিবসও। প্রিয়জনকে ভালোবাসা জানানো, বাসন্তি সাজে নিজেকে রাঙিয়ে তুলতে ব্যস্ত শিশু, নারী-পুরুষসহ সব বয়সের মানুষ। মন রাঙিয়ে দিতে নানা আয়োজন ছিল নগরজুড়ে। সকল আয়োজনে সত্যিকার মানুষ হয়ে রঙিন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান বক্তারা।
উদীচী ও বরিশাল নাটকের আয়োজনে অনুষ্ঠিত জগদীশ সাস্বরত বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ প্রাঙ্গনে মানুষের ঢল নামে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বঙ্গবন্ধু উদ্যানেও মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।
বিকেল সাড়ে চারটায় মঞ্চে বেজে ওঠে ‘আজ সবার রঙে রঙ মিশাতে হবে, ওগো আমার প্রিয় তোমার রঙিন উত্তরীয়…’ রবীন্দ্রনাথের এই গান। সঙ্গে সঙ্গে উদীচী এবং বরিশাল নাটকের কর্মীরা ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় আগত অতিথি, দর্শক-শ্রোতাদের।
‘বাসন্তি বিকেলে এসো স্নাত হব আনন্দ ধারায়’ শিরোনামে তিনদিনের বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী এবং বরিশাল নাটক।
বসন্ত উৎসব উপলক্ষে সারস্বত বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বাসন্তি রঙে সাজানো মঞ্চ নান্দনিক মঞ্চ সজ্জার আর বসন্ত উৎসবের বর্ণিল আয়োজনে একাকার হয়ে যায় নগরবাসী। সময় পুরো মাঠ জুড়ে কেবল হলুদের ছাড়াছড়ি চোখে পড়ে।
ব্যতিক্রমী আয়োজনে ছিল না কোন সভাপতি। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহামানের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান।
বসন্ত উৎসবে বরেন্য রবীন্দ্র গবেষক ড. নূরুল আনোয়ার বলেন, বসন্ত আমাদের রঙিন করে দেয়। আমরা রঙিন হয়ে অনেক সময় হারিয়ে যাই। মানুষ হিসেবে আমাদের যে দায় আছে সেটা ভুলে যাই। বসন্ত উৎসবের মাধ্যমে আমাদের সত্যিকার মানুষ হয়ে বাঙালি সংস্কৃতি চর্চা করা দরকার। নতুন প্রজন্মকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সত্যিকার রঙিন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমাদের প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে।
আবৃত্তি, সঙ্গীত, নৃত্য-কথামালায় পুরো অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। বসন্ত উৎসবের বর্ণিল আয়োজনে গান, আবৃত্তি, নৃত্যের ফাঁকে ফঁকে পর্যায়ক্রমে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অ্যাড. মানবেন্দ্র বটব্যাল, সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ, জগদীশ সারস্বত বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. আশ আলম, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য ও বরিশাল নাটকের সাবেক সভাপতি আজমল হোসেন লাবু, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পাপিয়া জেসমিন, উদীচী সহসভাপতি অ্যাড. বিশ^নাথ দাশ মুনসী, কাজী সেলিনা, খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ চক্রবর্তী, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুখেন্দু সরকার, বরিশাল নাটক সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী, আওয়ামী লীগ নেতা তরুন চন্দ, অ্যাড. লস্কর নূরুল হক সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিশিষ্ট নাগরিকরা।
বরিশাল নাটক পরিচালিত আবৃত্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় আবৃত্তির পরই কবিতার ক্লাশ আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা আবৃত্তি পরিবেশন করে। এরপরসঙ্গীত পরিবেশন করে উত্তরণ সাংস্কৃতিক সংগঠন, গণশিল্পী শিল্পী সংস্থা। পরে নৃত্য পরিবেশন করে উদীচী, নৃত্যাঙ্গন নৃত্য একাডেমি। একক সঙ্গীত পরিবেশন করে স্নেহাংশু বিশ্বাস, মিঠুন রায়, কমল ঘোষ, মুনিয়া রহমান রচি।
এদিকে বসন্তকে বরণ করতে নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বসন্ত উৎসবেও মানুষের ঢল নামে। এর বাইরে সকাল ১০টায় সরকারী মহিলা কলেজের বকুল আলোকায়ন মঞ্চে বসন্ত উৎসবের উদ্বোধন করেন অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আসাদুজ্জামান। ফুলে ফুলে এবং বাসন্তি রংয়ের শাড়ি পরে সেঁজেছে এই কলেজের শিক্ষার্থীরা। কবিতা আবৃত্তি, নাচ, গান আর মডেলিং সহ বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে দিয়ে দিবসটি উদযাপন করছে তারা।
এ ছাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রজমোহন কলেজ, সকরারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, সরকারি বরিশাল কলেজ, অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পৃথক পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।