আমলাতন্ত্র, কম বিনিয়োগ ও জবাবদিহিতার অভাবে টেলিটক বিকশিত হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। সোমবার(৩ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকই চায় তার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ভালো চলুক। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির লাভের প্রতিযোগিতায় লাগাম টানতেই রাষ্ট্র তার নিজের প্রতিষ্ঠান তৈরি করে। তাছাড়া আপদকালীন সময় মোকাবেলায় বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সরকার টেলিটকের যাত্রা শুরু করেছিল এ চিন্তা থেকেই। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক চায় তার অর্থ রাষ্ট্রেই থেকে যাক। বর্তমানে আমরা ৩.৮ বিলিয়ন ডলার কথা বলতে ব্যয় করছি। যার ৯০ ভাগই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, জিডিপি’তে টেলিযোগাযোগ খাতের অবদান প্রায় ৬.৫ শতাংশ। এত বিপুল সম্ভাবনার একটি খাত থেকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অর্জন প্রায় শূন্যের কোটায়। ১৬ কোটি ২০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা মাত্র ৪৮ লাখ। বর্তমানে টেলিটক সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, সাংসদ ও মন্ত্রী পর্যায়েও টেলিটক ব্যবহার করার নজির পাওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি যে, টেলিটকের সেবার মূল্য অন্যান্য অপারেটরের তুলনায় কম। ২জি নেটওয়ার্ক সারাদেশব্যাপী রয়েছে তবে তা দুর্বল। ৩জি নেটওয়ার্ক সারাদেশ ব্যাপী নেই। ৪জি নেটওয়ার্ক রয়েছে শুধুমাত্র ঢাকায়। রিটেলার সংখ্যা খুবই নগণ্য। মোবাইল ব্যাংকিংই রিচার্জ করার একমাত্র ভরসা। চেয়ারম্যান মন্ত্রণালয়ের সচিব, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিটিসিএল থেকে আগত, তাছাড়া জিএম, ডিজিএম, এজিএমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিটিসিএল বা ডাক বিভাগ থেকে বদলি হয়ে আসা। প্রচলিত কথা আছে মন্ত্রণালয়ে তদবির করে লাভজনক বলে অনেকেই টেলিটকে বদলি হয়ে আসেন। এসব কর্তাব্যক্তিদের জবাবদিহিতা কোথায়? মন্ত্রণালয় বা তার মূল প্রতিষ্ঠানে।
তিনি বলেন, যখন জিপি ও রবির লাইসেন্স বাতিলের প্রশ্ন আসলো তখন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বারবার বলেছেন, আমরা টেলিটক দিয়ে বিকল্প সেবা তৈরি করবো। মন্ত্রীর ইচ্ছা ও চিন্তা ভালো। কিন্তু মূল ভাইরাস নির্মূল না করে দামি ওষুধ দিয়ে যেমন রোগ ভালো করা যায় না তেমনি টেলিটকেরও উন্নতি হয় না। এই প্রতিষ্ঠানটি অল্প সংখ্যক গ্রাহক নিয়েও লোকসানে নাই। তবে রাষ্ট্রীয় সুবিধার মূল্য ও বিনিয়োগের সুদ ধরলে এটি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান।
যেখানে জিপি, রবি ও বাংলালিংকের বিনিয়োগ যথাক্রমে ৪০, ৩০ ও ২০ হাজার কোটি টাকা সেখানে টেলিটকের বিনিয়োগ মাত্র ৪ হাজার ৮ শত কোটি টাকা। টেলিটকের নিজস্ব কোনো ভবন নাই। তিনটি আলাদা ভাড়া ভবনে চলছে টেলিটকের কর্মকাণ্ড। এখানে জবাবদিহিতার কোনো বালাই নাই। টেলিটকের এমডি নিজেই দু’টি প্রকল্পের পরিচালক। গ্রাহকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে উনারা কথা বলতে চান না। দুর্নীতি-অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতা এখানে একাকার। টেলিটকের কাছে বিটিআরসির পাওনা রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬ শত কোটি টাকা। এ প্রতিষ্ঠানে দক্ষ জনবলের অভাব নেই তবে সুশাসনের রয়েছে চরম অভাব।
টেলিটককে লাভজনক করার জন্য বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয় মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সচিব না হয়ে টার্গেটের ভিত্তিতে বিকল্প দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে নিয়োগ করা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হবেন টেলিটকের নিজস্ব কর্মকর্তা বিটিসিএল বা ডাক বিভাগের নয়। প্রকল্প পরিচালক হবেন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যেকোন মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য একটি গ্রাহক ফোরাম থাকবে। যেখানে সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, গ্রাহক প্রতিনিধি ও স্টেক হোল্ডারগণ থাকবেন।