আলোচনা আর সমালোচনার ঘূর্নীঝড়ে দোল খাচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের বাগেরহাট জেলার রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বানানোর সিদ্ধান্ত । শুরু থেকেই এই প্রকল্পের সমালোচনা করছেন পরিবেশবাদী কয়েকটি এনজিও, বেশ কয়েকটি নাগরিক সংগঠন এবং কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এ বিষয়ে যাঁরা বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত, তাঁদের অনেকেই এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে সরব, আবার কেউ কেউ এর সমর্থক। বিষয়টা যেন জেদাজেদির পর্যায়ে চলে গেছে। আর এই জেদাজেদির মাঝখানে পড়ে আমজনতা খাবি খাচ্ছে।
পরিবেশবাদীদের এবং সংশ্লিষ্ট নাগরিক সমাজের এ নিয়ে শঙ্কা থাকলেও কেন যেন বিষয়টিতে রাজনীতি ঢুকে পড়েছে। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, সরকার পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিল, তাহলে তারা নিঃসন্দেহে নাগরিকদের সাধুবাদ পাবে।
প্রচার-প্রচারণায় ছয়লাভ হয়ে আন্দোলনকারীরা বলছেন সরকার দেশ বেঁচে দিচ্ছে, ভারত এই প্রকল্প চাপিয়ে দিয়েছে এবং শেখ হাসিনা স্বয়ং সুন্দরবন ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছেন। কিন্তু আমি বিষয়টা মানতে পারছিনা কারন শেখ হাসিনার সরকারের এমন অধপতন হয়নি যে দেশ ধ্বংস করবে।
আমরা যুক্তি শুনছি, প্রকল্প এক জায়গায় না হলে আরেক জায়গায় করা যেতে পারে। কিন্তু সুন্দরবন তো একটাই। ওটা খোয়া গেলে তো আরেকটা পাওয়া যাবে না। যুক্তি একদম ঠিক কিন্তু সরকার ইচ্ছে করে সুন্দরবন ধ্বংস করে দেবে, এটাও তো বিশ্বাস হয় না। তাহলে গোল বাধল কোথায়?। ধরে নিলাম যদি প্রকল্পটি অন্য যায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় তাতে কি আমাদের তথা আমজনতার কোন লাভ হবে?। সব জায়গায় তো মানবশিশু আছে, গাছ আছে, মাছ আছে। কয়লা তো আর দূষণমুক্ত হবে না।তাহলে এই প্রকল্পটি যেখানেই নেয়া হোক সেখানেই কিছুনা কিছু সমস্যা হবে।
আসলে সমস্যা কি রামপাল, না কয়লা?
আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে আমার ধারণা বেশ ইতিবাচক। তবে তাঁদের সঙ্গে বসন্তের কোকিলও আছেন কেউ কেউ। সুযোগ পেলেই বিবৃতিতে সই দিয়ে তাঁরা সংবাদ শিরোনাম হতে চান।
শেখ হাসিনার সরকার সুন্দরবন ধ্বংস করে ফেলবে, যেমন আমি মনে করিনা তেমনি যাঁরা সুন্দরবন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তাঁদের ঢালাওভাবে বিদেশি কোনো শক্তির দালাল বলার মতো রুচিহীনতা মানতে পারছিনা। যুক্তির ঝুলি শূন্য হয়ে গেলে প্রতিপক্ষকে গালাগাল দেওয়া যেন আমাদের খাসলত। আমরা যদি ৩০-৪০ হাজার মেগাওয়াটের উৎপাদন ক্ষমতায় পৌঁছানোর চিন্তা করি, তাহলে সামান্য ১৩২০ মেগাওয়াট নিয়ে কেন এই তামাসা?
আসলে আমি সবার আগে কয়লা ব্যবহারের নীতিমালা তৈরি করতে সরকারের কাছে অনুরোদ করছি।
(Visited ৫ times, ১ visits today)