টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইল শহরের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক মেস গুলোতে র্যাগিং এর নামে চলছে ভয়াবহ অপরাধ চর্চা। নবীন শিক্ষার্থীদের উপর চলছে ভয়ংকর অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। কেড়ে নেয়াহচ্ছে টাকাপয়সা, মোবাইলসহ মুল্যবান দ্রব্যাদি। নির্যাতিত শিক্ষার্থী অনেকেই ভয় এবং আতংকে শিক্ষা জীবন শেষ না করেই নীরবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। যারা টিকে থাকছে তাদের ঘটে যাচ্ছে মানসিক বিকৃতি। প্রতিশোধ স্পৃহা নিয়ে কেউ কেউ ভিড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন অপরাধী গ্যাং গুলোর সঙ্গে। র্যাগিং এর বিষাক্ত ছোবল থেকে এখন সাধারণ পরীক্ষার্থীরাও রেহায় পাচ্ছে না। নবীন শিক্ষার্থী যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় পা রাখার রঙিন স্বপ্ন দেখে তাদের এবং অভিভাবকদের কাছে র্যাগিং একটি আতঙ্কের নাম হিসাবে পরিগনিত হচ্ছে। র্যাগিং শব্দের প্রচলিত অর্থ হচ্ছে পরিচয় পর্ব অর্থাৎ ‘ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষার্থীদের সাথে পুরাতন শিক্ষার্থীদের একটা সখ্য গড়ে তোলার জন্য যে পরিচিতি প্রথা সেটাকে র্যাগিং বলে অভিহিত করা হয়। র্যাগিং এর প্রথম শুরু হয়েছিল গ্রিক কালচারে; সপ্তম ও অষ্ঠম শতকে খেলার মাঠে টিম স্পিরিট নিয়ে আসার জন্য। আমাদের উপমহাদেশে ইংরেজদের মাধ্যমে এই অপসংস্কৃতি অনুপ্রবেশ করে এবং এর বিবর্তিত রুপটা রয়ে যায়। যেসব দেশে র্যাগিং এর উদ্ভব হয়েছে, তারা সময়ের সাথে সাথে ঠিকই এর প্রভাব মুক্ত হয়েছে আর আমাদের উপমহাদেশে আরো ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। ইতিহাসের অন্যতম ভয়ানক র্যাগিং এর ঘটনা ঘটে ভারতে। শিক্ষার্থীর যৌনাঙ্গ দিয়ে সূচ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। টাঙ্গাইলের ভার্সিটি গুলোতেও ইদানিং এই র্যাগিং এর বিকৃতরূপ চালু হয়েছে। এবং এতটাই প্রকটা আকার ধারণ করেছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আবাসিক এলাকার মেসগুলোতেও র্যাগিং এর নামে ঘটছে বিভিন্ন মারাত্বক অপরাধ। অপরাধগুলো এতদিন চাপা থাকলেও ইদানিং বের হয়ে আসতে শুরু হয়েছে। এমনই একটা ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে গত ১মার্চে। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষার মেধাতালিকায় স্থান পেয়ে ভর্তির তিনদিনের মাথায় নবীন ছাত্রটিকে ফোনকরে ডেকে নেয়াহয় টাঙ্গাইল শহরের বেপারীপাড়া এলাকার একটি ছাত্র মেসে। রুমে আটকিয়ে রেখে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন। শিক্ষার্থীর মোবাইল কেড়ে নিয়ে সেই মোবাইল দিয়ে বিভিন্নজনকে দেয়া হয় হুমকী। চড়থাপ্পর কিলঘুসির পাশাপাশি পিটানো হয় ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে। দাবীকরা হয় নিয়মিত মাসোয়ারা। মেসের একটি আবদ্ধ কক্ষথেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও মামার বাসায় থাকা ছাত্রটি অভিভাবকদের বলতে সাহস পাচ্ছিলো না এতো রাত অবধি কোথায় ছিলো, আর সারা গায়ে এই জখমের চিহ্ন গুলো কোথাথেকে এলো! চাপাচাপির একপর্যায়ে স্বীকার করলেও অনেক শিক্ষার্থীই নিজ অসহায়ত্বের কথা চিন্তা করে মেনেনিচ্ছে এই অত্যাচার। এবং পরবর্তীতে নিজেই জড়িয়ে যাচ্ছে অনুরূপ অপরাধে। আমরা বাজে সংস্কৃতিটাকে লালন পালন করছি কিন্তু যাঁরা এর সূচনা করেছে তারা অনেক আগেই ছুড়ে ফেলেছে। আমাদেরও সময় এসেছে র্যাগিংএর নামে পাড়ামহল্লার মেস গুলোতে অপরাধমূলক কর্মকান্ড গুলোর দিকে দৃষ্টি দেয়ার।