অনলাইন ডেস্ক :: প্রজনন মৌসুমে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পটুয়াখালীর নদী বেষ্টিত দুমকি উপজেলার পায়রা ও লোহালিয়া নদীতে জেলেরা প্রকাশ্যে দিনের বেলা অবাধে মা ইলিশ শিকার করছেন। উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের অভিযান এড়িয়ে এলাকার অসাধু জেলেরা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নদীতে জাল ফেলে শিকার করছে মা-ইলিশ।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৯ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে শুক্রবার পর্যন্ত একটানা ১৭ দিনের অভিযানে ইউএনও শঙ্কর কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে মৎস্য কর্মকর্তা , উপজেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা, পুলিশসহ প্রশাসনের একাধিক টিম পায়রা ও লোহালিয়া নদীর চরগরবদী, কদমতলা, পাতাবুনিয়া, ঝিলনা, আলগী, ধোপারহাট, হাজিরহাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোট ১৮ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ, পাঁচ জেলের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা ও ৯ জেলেকে এক বছর এবং এক জেলেকে সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঙ্গাশিয়ার আলগী, কানকী, লেবুখালী, বাহেরচর, পাংসিঘাট, পাতাবুনিয়া এলাকার পায়রা নদী ও চরগরবদী, বগা, মজুমদারহাট এলাকার লোহালিয়া নদীতে রাতদিন প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে নানা কৌশলে কারেন্ট জাল ফেলে জেলেরা ডিমওয়ালা ইলিশ শিকার করছেন। আহরিত ইলিশ রাতারাতিই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। দিনে-রাতে উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও পুলিশি অভিযান থাকায় জেলেরা গভীর রাতে চুরি করে নদীতে জাল ফেলে ইলিশ শিকার করছেন। বর্তমানে পায়রা ও লোহালিয়া নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে মা ইলিশ। অভিযানে ইউএনও, মৎস্য কর্মকর্তা, ওসি থাকলেও রহস্যজনক কারণে অভিযান তেমন সফল হচ্ছে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মৎস্য বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের গোপন যোগাযোগে জেলেরা আগে টের পেয়ে আত্মগোপন করায় অভিযান তেমন একটা সফল হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জলিশা জেলে পাড়ার জনৈক বাসিন্দা জানান, অভিযান টিমের গতিবিধি লক্ষ্য রেখেই জলিশা জেলে পাড়ার জেলেরা রাতের অন্ধকারে কলার ভেলায় নদীতে জাল ফেলে ইলিশ শিকার করছেন। তিনি আরো জানান, অভিযান টিম কোথায় বা কোন দিকে যাচ্ছে মোবাইল ফোনের সেই তথ্য মাথায় রেখেই তারা অত্যন্ত সতর্ক হয়ে নদীতে নামে। এছাড়া নদীর তীরেও জেলেদের নিজস্ব লোকজন পাহাড়ায় থাকে। দূর থেকে স্পীড বোট বা ট্রলারের শব্দ পেলেই জেলেদের সতর্ক সংকেত জানিয়ে দেন। অভিযানের টিম ওই যায়গায় পৌঁছানোর পূর্বেই জাল নদীতে বা তীরে ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে রেখে পালিয়ে যান।
পায়রা নদীর তীরবর্তী আলগি গ্রামের বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর মৃধা জানান, এবার মৎস্য বিভাগের অভিযানে দ্রুতযান (স্পীড বোট) ব্যবহার করায় জেলেরাও নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার বাদ দিয়ে কলার ভেলায় জাল ফেলছে। অধিকাংশ জেলেরা নদীতে ডুবন্ত জাল দিয়ে নদীর বিপরীত তীরে ঝোপঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকেন। অভিযানের টিম চলে যাওয়ার পর তারা সেই জাল তুলে নেন। এভাবে রাতভর চলে ওইসব জেলেদের মা-ইলিশ শিকার।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বর্তমান প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষায় পায়রা ও লোহালিয়া নদীতে অভিযান অব্যাহত আছে। জনসচেতনতা বাড়াতে পোস্টার, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করা হয়েছে। জেলে পাড়াগুলো কড়া নজরদাড়িতে রাখা হয়েছে। এর পরেও রাতের আঁধারে চুরি করে কেউ মাছ ধরলে আমাদের কি করার আছে। তবে জাল পাওয়া গেলে পুড়ে ফেলা হচ্ছে। ১৫ জন জেলেকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।