মঙ্গলবার , ১৬ জুলাই ২০১৯ | ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. Featured
  2. অন্যান্য খেলার সংবাদ
  3. অন্যান্য ধর্ম
  4. অপরাদ
  5. অর্থনীতি
  6. অলটাইম নিউজ লেটার
  7. আইটি টেক
  8. আইন – আদালত
  9. আইন শৃংখলা বাহিনী
  10. আন্তর্জাতিক
  11. আবহাওয়া বার্তা
  12. ইসলাম
  13. উদ্যোগ এবং পরিবর্তন
  14. ওয়েবসাইট
  15. কবিতা

বরিশাল ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট কিবরিয়ার জন্য কাঁদছেন সহকর্মীরা

প্রতিবেদক
Alltime BD News24 .com
জুলাই ১৬, ২০১৯ ১০:১৮ অপরাহ্ণ

অনলাইন ডেস্ক:যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যানের চাপায় ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ সহকর্মীরা। তারা বলেছেন, গোলাম কিবরিয়ার মৃতুতে পুলিশ বিভাগ যেমনি একজন সৎ, সাহসী ও দক্ষ অফিসার হারিয়েছেন, তেমনি আমরা হারিয়েছি কাছের এক স্বজনকে। যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করা সম্ভব নয়।

কিবরিয়ার সহকর্মীরা তার স্মৃতিচারণের পাশাপাশি তাকে চাপা দেয়া যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যানের চালক মো. জলিল মিয়ার কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার কর্মস্থল নগরীর কালীবাড়ি রোড ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয় গিয়ে দেখা যায় পিনপতন নীরবতা।

আজ অফিসে যারা কাজ করছেন তাদের মুখগুলো ছিল বিষাদময়। শোকের আবহ বিরাজ করছিল পুরো কার্যালয়ে। সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া প্রতিদিন দায়িত্ব পালন শেষে যে চেয়ারটিতে বসতেন সেটি খালি পড়ে ছিল। পাশের টেবিলে ভারাক্রান্ত মনে বসে ছিলেন গোলাম কিবরিয়ার সিনিয়র অফিসার ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) সামছুল আলম।

কথা হয় সামছুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, গোলাম কিবরিয়া সদালাপী একজন মানুষ ছিলেন। কখনো দায়িত্ব পালনে অবহেলা করতেন না। গোলাম কিবরিয়া নিষ্ঠাবান পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। কারো বিপদে-আপদে বা যেকোনো কাজে যখন তাকে ডাকা হয়েছে তখনই পাওয়া গেছে। কাজকে কষ্ট মনে করতেন না কিবরিয়া। তার বিকল্প পাওয়া মুশকিল। আসলে তার উদাহরণ তিনি নিজেই।

 

পরিদর্শক সামছুল আলম আরও বলেন, গোলাম কিবরিয়া ২০১৫ সালে পুলিশে যোগ দেন। ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগে যোগ দেন। তার অকাল মৃত্যুতে পুলিশ বাহিনী নিষ্ঠাবান দক্ষ এক কর্মকর্তাকে হারিয়েছে।

 

সামছুল আলম আরও বলেন, গোলাম কিবরিয়া চাকরিতে প্রবেশের কয়েক বছরের মাথায় বরিশালে কর্মরত সার্জেন্ট মৌসুমী আক্তারকে বিয়ে করেন। তাদের দুই বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। সন্তানের নাম ওহি। সার্জেন্ট মৌসুমীকে শোক সইবার শক্তি দেক আল্লাহ।

 

পরিদর্শক সামছুল আলমের সঙ্গে কথা বলার সময় পাশেই ছিলেন গোলাম কিবরিয়ার সহকর্মী এএসআই সানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়াকে অফিসের সিনিয়র-জুনিয়র সবাই পছন্দ করতেন। তিনি মিষ্টিভাষি ছিলেন। বড় ভালো লোক ছিলেন। তার ব্যবহার ছিল বিনয়ী। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি আমরা।

কিবরিয়ার আরেক সহকর্মী সার্জেন্ট মশিউর রহমান বলেন, গোলাম কিবরিয়া শুধু সহকর্মী ছিল না, আমারা ভাইয়ের মতো ছিলাম। তার অকাল মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কিবরিয়া ও আমার বাড়ি ছিল একই এলাকায়। এ কারণে তার সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক ছিল। এতো তাড়াতাড়ি তার মৃত্যু হবে ভাবিনি। এই শোক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

আরেক সহকর্মী সার্জেন্ট মো. টুটুল বলেন, একই সঙ্গে আমাদের চাকরি হয়েছে। চাকরির পর আমাদের একই কর্মস্থলে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। কিবরিয়া অনেক ভালো মানুষ। কোনো সমস্যা হলে সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়তো। বরিশাল নগরীর সবাই তাকে ভালো মানুষ হিসেবে জানতেন।

 

গোলাম কিবরিয়ার সিনিয়র সার্জেন্ট মাহাবুব বলেন, কিবরিয়া আমার ছোট ভাইয়ের মতো ছিল। তার আচরণ অত্যন্ত মার্জিত ছিল। যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যানের চালকের কারণে তার জীবন চলে গেল। আমাদের একটাই দাবি ওই চালকের কঠোর শাস্তি হোক। কথাগুলো বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সার্জেন্ট মাহাবুব। এরপর তার চোখ ভিজে যায় পানিতে।

 

গোলাম কিবরিয়ার মাগফিরাত কামনা করে সার্জেন্ট মো. রানা বলেন, কিবরিয়া আমার জুনিয়র ছিল। সে সবার সঙ্গে হাসি-খুশি ছিল। তার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তার উপযুক্ত বিচার চাই আমরা। যাতে ভবিষ্যতে কোনো সার্জেন্টকে কেউ গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা করতে না পারে।

পুলিশের সার্জেন্ট তারিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার ১০ মিনিট আগে দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে মুঠোফোনে আমার সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। ১২টা ৩৫ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তার সঙ্গে শেষ কথা মনে হয়ে আমার হয়েছিল। কিবরিয়ার মৃতুতে কতটা আঘাত পেয়েছি তা বলে বোঝাতে পারব না। তাকে হারানোর দুঃখ আমাকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।

সার্জেন্ট তারিকুল ইসলাম আরও বলেন, একদিন আগেও যার সঙ্গে কথা বলেছি এখন সে মৃত। আর কোনোদিন তার সঙ্গে কথা হবে না, ভাবতেই কান্না আসে। আমি ঘাতক চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

 

গতকাল সোমবার সকাল থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের কর্নকাঠি জিরো পয়েন্ট এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পটুয়াখালীগামী যমুনা গ্রুপের বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ডভ্যানকে (ঢাকা-মেট্রো-উ-১২-২০৫৪) থামার সংকেত দেন সার্জেন্ট কিবরিয়া।

 

কাভার্ডভ্যানটি ট্রাফিকের সংকেত অমান্য করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সার্জেন্ট কিবরিয়া একটি মোটরসাইকেলে ধাওয়া করে কাভার্ডভ্যানটির সামনে গিয়ে ফের তাকে থামার সংকেত দেন। কাভার্ডভ্যানচালক জলিল মিয়া এ সময় মোটরসাইকেল আরোহী সার্জেন্ট কিবরিয়াকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে তার দুই পায়ের চারটি স্থান ভেঙে যায় এবং মূত্রথলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠির নলছিটি থানা পুলিশ ধাওয়া করে চালক জলিল সিকদারসহ কাভার্ডভ্যানটি আটক করে। সোমবার রাতে জলিল মিয়াকে আসামি করে বন্দর থানায় মামলা করেন বরিশাল ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম।

কিবরিয়ার অবস্থার অবনতি হওয়ায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকায় আনা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কিবরিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পরপরই তাকে জরুরি বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। মঙ্গলবার সকালে আইসিইউতে মারা যান গোলাম কিবরিয়া।

(Visited ১ times, ১ visits today)

সর্বশেষ - অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত