অনলাইন ডেস্ক : ২০১০ সালে ব্রেইন স্ট্রোক করে মারা যায় সুমাইয়ার বাবা নিজাম উদ্দিন। এর আগে তিনি শিক্ষকতা করতেন। মৃত্যুর আগে টানা তিন বছর বিছানায় পরে থাকতে হয়েছে সুমাইয়ার বাবাকে।
সহায় সম্বল যা ছিল তা দিয়ে বাবাকে শেষ রক্ষা করতে গিয়ে পরিবারটি দারিদ্রতার শেষ প্রান্তে পৌঁছে যায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না বাবার।
একদিকে বাবা হারানোর শোক, আর একদিকে দারিদ্রতা যেন কুড়ে খায় সুমাইয়ার পরিবারকে। তবুও পড়াশোনা ছাড়েনি সুমাইয়া। শেষ পর্যন্ত মাত্র ১০৩ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়েছেন তিনি। চলমান সমাজ, সভ্যতার প্রচলিত ঘুষের বাজারে বিনা টাকা চাকরি-যেন বিধাতার শ্রেষ্ঠ দান মনে হচ্ছে সুমাইয়ার কাছে।
শুধু সুমাইয়া নয়, বিনা টাকায় পটুয়াখালীতে ১৩০ জনের চাকরি হয়েছে পুলিশ কনস্টেবল পদে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সদ্য পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়া ১৩০ জনের সঙ্গে সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন পটুয়াখালী পুলিশ সুপার মো. মইনুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফারুক হোসেনসহ পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকতারা।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত এসপি পিরোজপুর সদর সার্কেল আহমাদ মাঈনুল মাহমুদ এবং অতিরিক্ত এসপি ভোলা মীর মো. শাফিন মাহমুদ প্রমুখ।
গত ২৯ জুন বাংলাদেশ পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষা-২০১৯ অনুষ্ঠিত হয়।
নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১১ জন, পুরুষ পোষ্য কোটায় ২ জন, সাধারন নারী কোটায় ৮ জন, এতিম কোটায় ১ জন, নারী মুক্তিযোদ্ধা কোটায় দুইজন ও বাকিরা যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ লাভ করেছে বলে জানান এসপি মইনুল হাসান।
এদিকে সংবর্ধনা নিতে আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পরেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া মাসুম বিল্লাহ। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জ উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামে।
তিনি জানান, রোগাক্রান্ত হয়ে ২০১১ সালে বাবা আবদুল মজিদ মারা যায়। ২০১৪ সালে মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মাসুমের দুই ভাই ইউনুছ (রাজমিস্ত্রী)ও সোহেল (শ্রমিক)তাকে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করায়।
মাসুম জানায়, বিনা ঘুষে চাকরি পাবো এটা এই সমাজে ভাবা যায় না। আমার চাকরি জীবনে ঘুষ নেব না বলে প্রতিজ্ঞা করছি আজ। আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এসপি স্যার মাইনুল হাসানের জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করছি। তার জন্য আমার পরিবার থেকে একটি কালো অধ্যায় সরে গেল।
কথা হয় পুলিশের চাকরি পাওয়া সাহারা আক্তারের সঙ্গে। সদর উপজেলার লাউকাঠিতে বাড়ি। বাবা আলী হোসেন মারা যাওয়ার পরে কোনোভাবে সংসার চলতো তাদের। এক ভাই ছরোয়ার আনসার সদস্য পদে চাকরি করেন। শত কষ্টের মাঝেও লেখাপড়া চালিয়ে আসছে সাহারা।
বিনা টাকায় চাকরি দেয়া হবে পুলিশের এমন প্রচার প্রথমে বিশ্বাস করেনি সাহারা। পরে ভাগ্যের ওপর নির্ভর হয়ে আবেদন করে সাহার। অবেশষে মাত্র ১০৩ টাকায় চাকরি পেয়ে অনেক খুশি।
সাহারা জানায়, বর্তমান সমাজে বিনা টাকায় চাকরি হয় এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।